ইসলামী ডেস্কঃ
শীত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক এবং উপকরণ ব্যবহার করে থাকেন। এ সময় পা শীত থেকে বাঁচাতে মোজা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। ছোট বড় মোটামুটি সবাই মোজা ব্যবহার করেন। বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মোজা পাওয়া যায়।
মোজা ব্যবহারের প্রচলন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও ছিল। হাদিস ও সিরাতের কিতাবগুলোতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন পোশাকের বিবরণ পাওয়া যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈচিত্র্যময় পোশাক পরিধান করতেন। জুমা, ঈদ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি বিশেষ পোশাক পরিধান করতেন। তার সফরের জন্য ছিল আলাদা পোশাক।
মহানবী সা. যে ধরনের মোজা পরতেন
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য অনেক পোশাক ও উপকরণের মতো পায়ে মোজা ব্যবহার করতেন। এ বিষয়ে হজরত আমির র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুগিরা ইবনে শুবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞেস করা হলো, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোজা কোথা থেকে এসেছিলো? তিনি বললেন, দাহয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তাকে দুটি মোজা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ব্যবহারও করেছিলেন। (তিরমিজি, বাবু লুবসিল জুব্বাহ,আখলাকুননবী সা. ৩৬৩)
হজরত ইবনে বুরায়দা তার পিতা বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নাজাশী (হাবশার বাদশাহ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কালো রঙের দুটি সাদামাটা চামড়ার মোজা উপহার পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজা দুটি পরেছেন এবং তার ওপর মাসেহ করেছেন। (তিরমিজি, বাবুন ফিল খুফফিল আসওয়াদ, আখলাকুননবী সা. ৩৬৪)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজা ব্যবহার করতেন এবং অন্যের দেওয়া উপহারও গ্রহণ করতেন তিনি।
এই হাদিস থেকে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত তাহলো-মোজার ওপর মাসেহ করা জায়েজ।
মোজার ওপর মাসেহের জন্য মুসাফির ও মুকিমের জন্য আলাদা আলাদা বিধান রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ১৩৫)
মুসাফির ব্যক্তি অজু করে মোজা পরিধানের পর থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত এবং মুকিম ব্যক্তি পরবর্তী একদিন পর্যন্ত যতবার অজু করতে ততবার পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করতে পারবে। মোজার ওপর তিন আঙুল পরিমাণ মাসাহ করে নিলেই চলবে। (রাদ্দুল মুহতার : ১/২৬০)
তবে সব মোজার ওপরই মাসাহ করা যায় না। (যেমন- সুতা ও নায়লনের মোজার ওপর মাসেহ করলে হবে না।) বরং মোজার ওপর মাসেহ করার জন্য মোজাটি টাখনু পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এমন অথবা চামড়ার মোজার গুণে উত্তীর্ণ হতে হবে।
মোজার ওপর মাসেহ সহি হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো-
১. পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)
২. মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)
৩. মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)
৪. উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।
৫. তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)
৬. মোজা এমন মোটা হতে হবে যেন উপরে পানি পড়লে ভেতরে না পৌঁছায়।
৭. সংকীর্ণতা বা রাবার অথবা সুতা ইত্যাদি দিয়ে বাঁধা ছাড়াও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে পায়ের সঙ্গে লেগে থাকে।
৮. শুধু ওই মোজা পরিধান করেই দুই-তিন মাইল হাঁটা যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১/১৮৮; ফাতহুল ক্বদির : ১/১০৯)