ইসলামি ডেস্কঃ
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই লেপের মধ্যে ঘুমাতাম।আরেক হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হলুদ রঙের লেপ ছিল। তার স্ত্রীগণ পালাক্রমে সেটি ব্যবহার করতেন। এই হাদিসের মাধ্যমে বুঝায় যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুধু একান্ত প্রয়োজন পূরণের মতো কাপড় ছিল।
অপর এক হাদিসে হজরত আইযার ইবনে হুরাইস রহিমাহুল্লাহ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন, (শীতের রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করতেন, লেপের এক প্রান্ত তার গায়ের ওপর থাকতো এবং আরেক প্রান্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার গায়ের ওপর থাকতো।
এই হাদিসের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহজ-সরল জীবনযাপনের চিত্র ফুটে উঠেছে। বুঝা যায় ঠাণ্ডা নিবারণের জন্য তার একটি মাত্র লেপ ছিল। তাহাজ্জুদ পড়ার সময় তিনি নিজে ওই লেপের একটি অংশ ব্যবহার করতেন এবং অপর অংশটি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার শরীরের ওপর থাকতো। তিনি শুধু প্রয়োজন পূরণের পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করতেন।
অন্য এক হাদিসে হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার শীতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোনো কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখলাম (শীতের কারণে) তিনি তার পবিত্র স্ত্রীদের একজনের সঙ্গে লেপ গায়ে জড়িয়ে বসে আছেন…
এক দীর্ঘ হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন আমি আমার খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার (প্রিয়নবী সা,-এর স্ত্রী) ঘরে মেহমান হলাম। রাতে তিনি একটি কম্বল এনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা হিসেবে মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। তারপর বালিশ এনে বিছানার মাথার দিকে রাখলেন এবং লাল রঙের একটি পশমী চাদর এনে বিছানার মাথার দিকে রাখলেন। তারপর নিজে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। তার মাথার পাশেই আমার জন্য একটি বিছানা পাতলেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজ শেষে ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তার বিছানার মাথার দিক থেকে একটি কাপড় নিয়ে লুঙ্গির মতো করে পরলেন, নিজের কামিজ ও ইযার খুলে খুঁটির মাথায় লটকিয়ে রাখলেন। এরপর মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার লেপের মধ্যে শুয়ে পড়লেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম শেষ রাতের দিকে উঠলেন এবং লটকিয়ে রাখা পানির মশক নিয়ে ঝাঁকুনি দিলেন আর পানি নিয়ে অজু করতে শুরু করলেন। আমার মন চাচ্ছিল আমি উঠে গিয়ে তাকে পানি ঢেলে দিয়ে অজু করিয়ে দেই। কিন্তু আমি এতোক্ষণ জেগে ছিলাম তিনি তা বুঝে ফেলবেন এ কারণে আমি উঠলাম না। অজু শেষে তিনি বিছানায় ফিরে এলেন, নিজের কাপড় পরলেন এবং জায়নামাজে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ পড়তে শুরু করলেন।
তখন আমিও উঠে অজু করে তার বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে পেছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে এনে ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং নামাজ পড়তে থাকলেন। আমি তার সঙ্গে তের রাকাত নামাজ পড়লাম। এরপর তিনি বসে পড়লে আমি তার পাশে বসে পড়লাম…
ইতোমধ্যে হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাজ প্রস্তুত। তখন তিনি উঠে মসজিদে গেলেন। মসজিদে প্রবেশ করেই তিনি দুই রাকাত সুন্নত পড়তে শুরু করলেন। হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন ফজরের নামাজের ইকামত শুরু করলেন।
হজরত উম্মুল মুমিনীন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খালা। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার বাবা হজরত আব্বাসের কথায় নিজের খালার ঘরে একদিন রাতযাপনের জন্য গিয়েছিলেন, যেন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের আমলগুলো দেখতে পান এবং তিনি রাতে কখন জেগে উঠেন কী পরিমাণ নামাজ আদায় করেন তা তিনি জানতে পারেন।