
পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
ছয় বছরের ছোট্ট আবদুল্লাহ জানে তার মা মারা গেছে। কিন্তু “মারা যাওয়া” মানে কী, সে বোঝে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে, আর কাঁপা কণ্ঠে বলতে থাকে, “মা মারা গেছে! আর আইবো না…” তার পাশেই পড়ে থাকা তার ১০ মাসের ছোট ভাই আবুবকর অবুঝ চোখে চারপাশ খুঁজে মা মা করে ডাকছে। কিন্তু মা তো আর ফিরবে না!
এই বুকের ধনদের আগলে রাখতে গিয়েই চিরতরে হারিয়ে গেলেন মা তানজিলা। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আরজবেগী বাজারের এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তানজিলার প্রাণ। সেদিন দুই ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু এই পথেই ওদের জীবন বদলে যায় চিরদিনের জন্য। একটি অবৈধ মাহিন্দ্র ট্রলির নিচে পড়ে যান তানজিলা।
মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগেও তিনি বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন ছোট্ট আবুবকরকে। ট্রলির ধাক্কায় তার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে পড়েছিল, শরীর থেঁতলে গিয়েছিল, কিন্তু বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখা ছোট্ট সন্তানটিকে একটুও আলগা করেননি। মা মরেও যেন সন্তানকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন!
স্থানীয়রা দৌড়ে এসে শিশুটিকে তুলে নেয়। আর একপাশে ৬ বছরের আবদুল্লাহ মাটিতে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু একটাই কথা বলতে থাকে, “মা মারা গেছে! আর আইবো না…”
আর কদিন পরই স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল আবদুল্লাহর। মা-ই ছিল তার পৃথিবী, তার সব স্বপ্নের শুরু। কিন্তু এক মুহূর্তেই যেন তার পৃথিবীটা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে।
তানজিলার স্বামী ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন, স্ত্রীর নিথর দেহ কবরে শুইয়ে দেন। কিন্তু শোকে ভেঙে পড়ারও সময় নেই তার। সামনে দাঁড়িয়ে দুই অবুঝ শিশু, যাদের এখন শুধু বাবাই অবলম্বন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওদের কাছ থেকে দূরে যাব না, কষ্ট হলেও মানুষ করব।”
এদিকে, যে চালকের কারণে এই দুর্ঘটনা, সেই রাকিবও গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সেও মারা যায়।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা করা সম্ভব নয়—কারণ যে প্রাণ হারিয়েছে, সেই তো দোষীও! কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে—এই অবৈধ মাহিন্দ্র ট্রলিগুলো কি তাহলে এভাবেই চলতে থাকবে?
আর কত শিশু এভাবে তাদের মায়ের ভালোবাসা হারাবে? কত শিশু আর্তনাদ করবে, “মা মারা গেছে! আর আইবো না…”
যে এই দুর্ঘটনার শিকার সেও মারা গেছে, যে প্রাণ কেড়েছে সেও চলে গেছে- তাহলে কার বিরুদ্ধে মামলা হবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, এই অবৈধ মাহিন্দ্র ট্রলিগুলো কি তাহলে এভাবেই চলতে থাকবে? আর আব্দুল্লাহ ও আবুবকরের মতো কত শিশু এভাবে তাদের মায়ের ভালোবাসা হারাবে। আর কত শিশু আর্তনাদ করবে।