ইসলামী ডেস্ক রিপোর্টঃ
আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য যেসব পশু-প্রাণী ও পাখির গোশতে কল্যাণ ও উপকার রেখেছেন, তাই বান্দার জন্য হালাল করেছেন। তাই পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারি সবধরনের খাবার গ্রহণে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। যেসব খাবার অপবিত্র ও অবৈধ তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। এ কারণে সব পশু-প্রাণী বা পাখির গোশত খাওয়া ইসলামে বৈধ নয়।
কিছু কিছু প্রাণী যেমন শুকর, গৃহপালিত গাধা, মৃত প্রাণীর গোশত, প্রাণীর রক্ত ইত্যাদিকে সরাসরি কোরআন ও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু, গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু, প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু, উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু, অন্যপ্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ নির্ণয় করা এসব পাপ কাজ।’। (সূরা মায়েদা, (৫), আয়াত : ৩)
হালাল-হারাম সম্পর্কিত কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রণীত মূলনীতি অনুসারে যেসব পশু পাখির গোশত খাওয়া হালাল তা হলো- উট, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ, গরু (বন্য গরুসহ), বন্য গাধা, হাঁস, মুরগী, তিতির, হুদহুদ, রাজহাঁস, বক, সারস, উটপাখি, ময়ুর, চড়ই, কোয়েল, ঘুঘু, কবুতর, পানকৌড়ী এবং মাছ (চিংড়িসহ), ইত্যাদি।
এর বাইরে যেসব পশু-পাখির মাংস খাওয়া হারাম তা হলো- শুকর, হায়না, নেকড়ে কুকুর, বিড়াল, বানর, চিতা, সিংহ, বাঘ, জারবয়া, ভাল্লুক, সাপ, কাঠ বিড়ালী, কচ্ছপ, বেজী, শিয়াল, গৃহপালিত গাধা, হাতি। (রাদ্দুল মুহ্তার, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩০৬)।
যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া যায় তা জবাই করার পর ধুয়ে রান্না করা উত্তম তবে কেউ যদি না ধুয়েই গোশতে কোনো ময়লা লাগার আগেই তা রান্না করে ফেলে চাই তা হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া বা হালাল যেকোনো প্রাণীর গোশত হোক— এই গোশত খাওয়া যাবে।এক্ষেত্রে অনেকের প্রশ্ন থাকে হালাল প্রাণী জবাইয়ের পর গোশতে কোনো ময়লা না থাকলেও অনেক সময় হালকা রক্ত লেগে থাকে। রক্ত লেগে থাকলে এই গোশত রান্না করে খাওয়া যাবে কিনা?
এ ক্ষেত্রে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, পশু জবাই করার পর গোশতে যে রক্ত থাকে তা অপবিত্র নয়। কারণ তা প্রবাহিত রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ রক্তসহ গোশত রান্না করা এবং তা খাওয়া জায়েজ আছে।কাতাদা রহ. সূরা আনআমের ১৪৫ নম্বর আয়াতের أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا অংশের তাফসীরে বলেন-
حرم الدم ما كان مسفوحا، وأما لحم خالطه دم، فلا بأس به
কোরআনে প্রবাহিত রক্তকে হারাম করা হয়েছে। তবে গোশতে যে রক্ত থাকে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
(তাফসীরে তবারী, বর্ণনা ১৪০৯০, আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/১২৩; উয়ূনুল মাসায়িল, পৃ. ২০;, আল-কাউসার অনলাইন, শরহু মুখতাসিরল কারখী, কুদূরী ১/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯)