বিনোদন ডেস্ক:
মা-ই হচ্ছেন সব সন্তানের একমাত্র আশ্রয়স্থল। সন্তানদের একমাত্র শান্তির জায়গা। মায়ের পরম যত্ন ও ভালোবাসায় বেড়ে ওঠে ছোট্ট শিশুটি। মা-ই সন্তানদের ভালো বন্ধু। যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়, হাসিতে মেতে ওঠা যায়, সব শেয়ার করা যায়। মাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক-সিনেমা। পাশাপাশি গানও তৈরি হয়েছে মাকে ঘিরে।
মাকে নিয়ে অনেক গানই তৈরি হয়েছে। সেসব গানে মাকে নিয়ে থাকা বিভিন্ন রকম কথা আপ্লুত করে দর্শক-শ্রোতাদের। বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় মাকে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়।
মাকে নিয়ে রচিত এমন জনপ্রিয় সাতটি গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের আয়োজন—
মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম : এখন পর্যন্ত মাকে নিয়ে যতগুলো গান তৈরি হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত গান এটি। ফকির আলমগীরের গাওয়া এই গানটি আজও ঝড় তোলে শ্রোতাদের মনে। ১৯৭৭ সালে ফকির আলমগীর তার মাকে নিয়ে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে অন্ধ এক বাউলের সঙ্গে দেখা হয় তার। দোতারা বাজিয়ে মনের সুখে দেহতত্ত্বের গান গাইছেন। গানটা শুনেই তার কানে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই রেকর্ডার বের করে গানটা ধারণ করে নেন তিনি। পরে গানটি বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে নিজের মতো তৈরি করে কণ্ঠ দেন এই সঙ্গীতশিল্পী। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে বিটিভির জন্য আবারও গানটি রেকর্ড করান অজিত রায়।
মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে : মাকে নিয়ে প্রকাশিত অন্যতম সেরা গান ‘মায়ের মতো আপন কেহ নাই রে।’ আতাউর রহমানের কথা ও সুরে এই গানটি গেয়েছিলেন রুমানা ইসলাম। ১৯৭৯ সালে ‘দিন যায় কথা থাকে’ অ্যালবামে এই গানটি প্রকাশিত হয়। এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে শোনা যায় গানটি।
এমন একটা মা দে না : ১৯৭৪ সালে কলেজে পড়ার সময় একটি গান গাওয়ার ডাক পান ফেরদৌস ওয়াহিদ। প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই তাকে একদিন ডেকে বলেন, একটা গান গাইতে হবে। গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন ডা. নাসির আহমেদ। গানটা শোনার পর ভীষণ পছন্দ হয় তার। ফিরোজ সাঁই আরও বললেন, ‘গানটি তোমার গলায় খুব মানাবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি শুধু টাকা জোগাড় কর।’ গানটি রেকর্ড করতে মোট খরচ হবে ৩৩০ টাকা। কিন্তু সেসময় এত টাকা ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে ছিল না। তবে চার বন্ধুর সহযোগিতায় টাকা জোগাড় হয়ে যায়। এরপর ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানে গানটি প্রচার হয়। চারদিকে ব্যাপক সাড়া ফেলে এটি। গানটির বয়স আজ প্রায় ৪০ বছর। এখনও গানটি অনেক জনপ্রিয়।
মাগো মা, ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা : এই গানটি খুরশিদ আলমের গাওয়া জনপ্রিয় একটি গান। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ সিনেমার গান এটি। গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পর্দায় এই গানে ঠোঁট মেলান নায়করাজ রাজ্জাক। গানটি প্রসঙ্গে খুরশিদ আলম বলেন, দুই-তিনদিন সময় লেগেছিল এই গানের কথা ও সুর তৈরি করতে। এরপর রেকর্ডিং হয় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে। সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরই গান হিট হয়। কিন্তু সত্যদা যেন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, গানটি হিট হবে। সেসময় তিনি আমাকে বলেন, যত দিন তুই বেঁচে থাকবি, ততদিন তোকে এই গানটা গাইতে হবে। তার সেই কথাটি সত্যে পরিণত হয়েছে। আমি যেখানে গান গাইতে যাই, সেখানেই এই গানটি গাইতে হয়।’
১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভধারণ : ১৯৯৭ সালে প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যাওয়ার পর এ রকম মানসিক কষ্টের ভেতরই ‘মা’ গানটি লিখেছেন তিনি। গানটি সুর করার পর অনেক ভেবে প্রিন্স ঠিক করলেন, জেমসকে দিয়ে গাওয়াবেন গানটি। জেমসের মাও বেঁচে নেই। ১৯৯৯ সালে ‘এখনও দুচোখে বন্যা’ মিশ্র অ্যালবামে গানটি প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনায় আসে গানটি। এটি জেমসের ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি গান হয়ে জ্বলজ্বল করছে এখনও।
আম্মাজান : ‘আম্মাজান, ও আম্মাজান, চোখের মণি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান, বুকের ধ্বনি আম্মাজান’— কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ সিনেমার গান এটি। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। মাকে নিয়ে যত গান আছে তার মধ্যে অন্যতম সেরা গান এটি। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দেন আইয়ুব বাচ্চু।
ওই আকাশের তারায় তারায় : ২০০৬ সালের দিকের কথা। হঠাৎ ভোর বেলা গীতিকার আসিফ ইকবালের ফোন এলো। কান্নাভেজা কণ্ঠ শুনে ভয় পেয়ে গেলেন ইমন। কী হয়েছে জানতে চাইলেই তিনি বলে উঠলেন, ‘১৪ বছর আগে এই দিনে মাকে হারিয়েছি। আজ প্রথমবার মাকে স্বপ্নে দেখেছি আমি। খুব খারাপ লাগছে।’ মাকে ভেবে লেখা চারটা লাইন ইমনকে শোনান তিনি। ইমন শুনেই বলে ওঠে, ভাই, আমি আপনার গানটা সুর করতে চাই। গানটা রাশেদকে দিয়ে গাওয়ান। ‘তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার’ ওই রাউন্ডটি প্রচার হওয়ার পর এই গানটি দিয়েই বিখ্যাত হয়ে যান রাশেদ। মাকে নিয়ে আবেগী গানগুলোর মধ্যে শীর্ষে স্থানে রয়েছে এই গানটিও।