মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ আইসিজের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, গণহত্যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজের বিচারক বিচারপতি আবদুল কায়ি আহমেদ ইউসুফ এই আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি।
আইসিজের বিচারক রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণা করেন। এগুলো হলো—এক. রোহিঙ্গাদের হত্যা, মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন ও ইচ্ছা করে আঘাত করতে পারবে না। দুই. গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ। তিন. মিয়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে, যেন তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এরপর প্রতি ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে। চার. গাম্বিয়া এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছিল, সেগুলো হলো—গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তি যেন কোনও ধরনের গণহত্যা না চালাতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া; গণহত্যা সংক্রান্ত কোনও ধরনের প্রমাণ নষ্ট না করা; বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল ও খারাপ করে, এমন কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া। পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে, আদেশের পরে ৪ মাসের মধ্যে উভয়পক্ষ তাদের নেওয়া পদক্ষেপ কোর্টকে জানাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় গণহত্যা সনদের অধীনে আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। আদালত বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব মিয়ানমারের। রোহিঙ্গারা গণহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। আদালত মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার অনীহা প্রকাশ করেছে।
গাম্বিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, রাখাইনের অভিযানে এসব কিছু্ই করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য। আদালত মনে করেন, গাম্বিয়া এর বিচার চাওয়ার যোগ্য। মিয়ানমার জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের ব্যাপারটি অস্বীকার করে যে আবেদন করেছে, আদালত তা খারিজ করে দেন। আদালত জানান, মিয়ানমার জেনোসাইড কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৯ লঙ্ঘন করেছে। এখন পর্যন্ত যেই আলামত আদালতের কাছে এসেছে, তাতে রোহিঙ্গারা হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আর এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের নির্দেশদাতা দায়ী।
আদালত মনে করেন, মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা জেনোসাইড কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী একটি ‘প্রটেক্টেড গ্রুপ’। ২০১৭ সালে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযানের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ও বেসামরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি। তাই অনেক বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছে।