মুসলিম সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদী কণ্ঠ পোপ ফ্রান্সিস

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করা পোপ ফ্রান্সিস ৮৮ বছর বয়সে সোমবার (২১ এপ্রিল) মারা গেছেন। পোপ ফ্রান্সিস ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের সব সময় তীব্র নিন্দা করেছেন।

তিনি বিভিন্ন বার্তা ও মন্তব্যে বলেন, ইসলামকে সহিংসতার সঙ্গে সমরূপ গণ্য করা ভুল এবং ইসলামী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর রাজনীতি ও সহিংসতা থেকে ধর্মকে মুক্ত রাখা জরুরি। উইঘুর, রোহিঙ্গা ও ইয়াজিদিদের মতো মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া নির্যাতন নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন ও গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ নিয়ে তিনি ‘নৃশংসতা’ ও ‘লজ্জাজনক’ শব্দ ব্যবহার করে প্রতিবাদ করেছেন এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজকে জরুরি শান্তি উদ্যোগ ও সম্ভাব্য গণহত্যার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে পোপ ফ্রান্সিসের বক্তব্য গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

‘ইসলামকে সহিংসতার সঙ্গে সমরূপ বলা ভুল; ঠিক যেমন সব খ্রিষ্টানকেও মৌলবাদী বলা যায় না—প্রতিটি ধর্মেই ছোট ছোট উগ্রপন্থি গোষ্ঠী আছে।’ রয়টার্স, ৩০ নভেম্বর ২০১৪

‘আমি প্রায়ই নিপীড়িত জাতিগুলোর কথা ভাবি– রোহিঙ্গারা, দুর্দশাগ্রস্ত উইঘুররা, ইয়াজিদিরা।’ এ মন্তব্যে পোপ ফ্রান্সিস উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চরম পীড়নের কথা তুলে ধরেন। রয়টার্স, ২৪ নভেম্বর ২০২০

২০২৫ এর রমজান মাস শুরুর প্রাক্কালে ভ্যাটিকানের বার্তায় তিনি আন্তঃধর্ম সংলাপের মাধ্যমে ‘হিংসা, বৈষম্য ও বর্জনের সব রূপ’ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোমান ক্যাথলিক চার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এ পদক্ষেপটি ইসরায়েলকে ‘হতাশ’ করেছিল। – যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ধর্মীয় গবেষণা বিশেষজ্ঞ ড. জর্ডান ডেনারি ডাফনার

‘গাজার সামরিক অভিযান কি জাতি নির্বাচিত সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে—এটি বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত।’ রয়টার্স, নভেম্বর ১৭, ২০২৪

‘গতকাল শিশুদের ওপর বোমা ছোঁড়া হয়েছে, এটি যুদ্ধ নয় নৃশংসতা, এটি আমাদের হৃদয় ছুঁয়েছে।’ রয়টার্স, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

‘গাজার মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং লজ্জাজনক। আমরা কখনোই শিশুদের ওপর বোমাবর্ষণ বা অসহায় বন্যায় ফেলে রাখাকে ক্ষমা করতে পারি না।’ রয়টার্স, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

২৩ মার্চ ২০২৫-এ হাসপাতালে থেকে পাঠানো বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস দিকনির্দেশনা দেন, ‘গাজার ওপর ভারি বোমাবর্ষণ বন্ধ হোক; সমস্ত হাতিয়ার নীরব করা হোক এবং দ্রুত বিদায়ী সংলাপ শুরু করা হোক।’ ভ্যাটিকানের বার্তা

ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। উপরের এসব বার্তা ছাড়াও তিনি সবসময় তার বার্তায় ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধ এবং নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে তিনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফিলিস্তিনসহ শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করতেন।

তিনি সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। বিভিন্ন গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে, যেকোনো ধর্মীয় বিরোধ এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় একজন প্রতিবাদী কণ্ঠ হারালো বিশ্ব। তিনি বিশ্ব মানবতার উদাহরণ হিসেবে মানুষের হৃদয় বেঁচে থাকবেন।