মৃত্যু নিশ্চিতে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে ৩ ডাকাত

প্রকাশিত: ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অভিযানকালে ডাকাতদলের তিন সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার ওরফে নির্জনকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ডাকাতরা সেনা কর্মকর্তার গলার ডান পাশে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতম জখম করে। এতে তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়। তখন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিলেন ওই সেনা কর্মকর্তা, কিন্তু এতেও তিনি রক্ষা পাননি। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় অভিযানের সময় সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ারকে এভাবে হত্যা করে ডাকাতরা। ছুরিকাঘাতে হত্যা করা তিন ডাকাত হলো- নুরুল আমিন, নাছির ও মোর্শেদ। গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার (২৩)।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতি প্রস্তুতির গোপন সংবাদ পেয়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে মেজর উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা যৌথ বাহিনী সদস্যদের দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের দাঁড়ানোর জন্য বলেন এবং একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এ সময় অস্ত্রধারী ডাকাতদলের হেলাল উদ্দিন, নুরুল আমিন, আবদুল করিম, মোর্শেদ আলম, নাছির উদ্দিন ও মিনহাজ উদ্দিন গুলি করতে করতে পালিয়ে যান। তখন তানজিম ছারোয়ার তাদের ধাওয়া করেন। কিছু দূর গিয়ে একটি বাড়ির উঠানে তারের বেড়ায় বেধে ডাকাত মোর্শেদ আলম পড়ে গেলে তাকে ধরে ফেলেন সেনা কর্মকর্তা।এ সময় ডাকাত নুরুল আমিন ও নাছির উদ্দিন ধরা পড়া মোর্শেদ আলম সেনা কর্মকর্তা তানজিমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। নুরুল আমিন, নাছির ও মোর্শেদ ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার ডান পাশে ছুরি চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে তানজিমের ফুসফুস পর্যন্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। গায়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক থাকলেও তিনজনের ছুরিকাঘাতে রক্ষা পাননি তিনি। তখন ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে স্থানীয় লোকজন ও অভিযানকারী দলের সদস্যদের আসতে দেখে গুরুতর জখম অবস্থায় তানজিম ছারোয়ারকে ফেলে ডাকাতরা বেড়া টপকে পালিয়ে যায়। পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রামু ক্যান্টনমেন্টের সিএমএইচে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার অন্তত তিন–চার দিন আগে থেকে আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, আনোয়ার হাকিম, জিয়াবুল করিম, মো. ইসমাইল হোসেন, নুরুল আমিন, নাছির উদ্দিন, আবদুল করিম, মোহাম্মদ সাদেক, আনোয়ারুল ইসলাম, মোর্শেদ আলম, শাহ আলম, আবু হানিফ, এনামুল হক, মো. এনাম, মো. কামাল ও মিনহাজ উদ্দিন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ডাকাতির প্রস্তুতি নিলে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এ সময় ডাকাতদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।

এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল্লাহ আল হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ চকরিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেন। মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পান চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ চার মাসের তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় এজাহারনামীয় ছয়জন আসামিকে বাদ দেন এবং নতুন করে সাতজনকে যুক্ত করে দুটি মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আসামিদের কললিস্ট পর্যালোচনা, গ্রেপ্তার আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং গোপন তদন্তে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার হত্যাকাণ্ডে ১৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে তা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া পলাতক ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি ১২ আসামি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।