আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েও ৪০০ আসন জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি নরেন্দ্র মোদির বিজেপির। জোট গড়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা থাকলেও, পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে দলটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের আগে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করে কট্টর হিন্দুদের মন জয় করলেও মেরুকরণের রাজনীতি সমানভাবে পছন্দ হয়নি দেশটির সব শ্রেণির মানুষের।
কথায় বলে, যত গর্জে তত বর্ষে না।
বিজেপির বেলায়ও যেন খেটে গেল সেই প্রবাদ বাক্য। ‘আব কি বার, ৪০০ পার’— লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে এই স্লোগানই বেছে নিয়েছিলেন টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদি। ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গঠনে ২৭২ আসন যথেষ্ট হলেও, এই স্লোগানের মাধ্যমে ভোটে ৪০০ আসন টার্গেট করেছিল তার দল।
আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছিল সাত দফা নির্বাচনের মাস চারেক আগে রামমন্দির উদ্বোধনের মতো মাস্টার স্ট্রোকও। কিন্তু মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে সব সমীকরণ।
বুথফেরত একাধিক জরিপের তথ্য বলছিল, ৪০০ আসনের লক্ষ্য পূরণ হয়তো অসম্ভব না। কিন্তু লোকসভায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটের বিশাল সেই স্বপ্ন এখন শুধুই মরীচিকা। পার্লামেন্টে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও এখন ধু ধু মরুভূমির মতো।
কারণ মঙ্গলবার (৪ জুন) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে দেশটির নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ২৪০টি আসন পেয়েছে। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৪ এবং ২০১৯ এর মতো ২০২৪ সালে কাজ করেনি মোদি ম্যাজিক। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করে গোড়া হিন্দুদের মন জিতলেও মেরুকরণের রাজনীতি সমানভাবে পছন্দ হয়নি দেশটির সব প্রান্তের সব শ্রেণির মানুষের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপিকে বিপদে ফেলেছে অগ্নিবীর প্রকল্পও। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রাজস্থান থেকে হাজার হাজার তরুণ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। অগ্নিবীর প্রকল্পে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ব্যবস্থা করা হয় চুক্তিভিত্তিক চার বছরের চাকরির। অর্থাৎ, মেয়াদ শেষে জওয়ানরা কিছু টাকা পেয়ে বেকার হবেন।
এছাড়া চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে থাকাকালে প্রাণ হারিয়ে ক্ষতিপূরণ পেলেও, পাবেন না শহীদের মর্যাদা। এখানেই ট্রাম্প কার্ড খেলেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট। তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকার গড়তে পারলে তুলে দেয়া হবে এই প্রথা। সেনাবাহিনীতে দুই ধরনের শহীদের স্থান থাকবে না। সবাই পাবেন একই রকম মর্যাদা, একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও পেনশন। হবে স্থায়ী নিযোগও।
প্রতিটি জনসভায় এই কথাই জানান রাহুল গান্ধী। কৃষক আন্দোলনের রেশও মোদির ৪০০ আসনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে, চলতি বছর ৬ মার্চ ভারতের প্রথম পানির নিচে মেট্রো উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি। এসপ্ল্যানেড হাওড়া মেট্রো রুটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য মানুষ। প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি খরচ করে তৈরি করা হয় ভারতের সবচেয়ে গভীরতম মেট্রো স্টেশনটি। এতকিছু করেও পশ্চিমবঙ্গে ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে পারেনি বিজেপি।
আগের চেয়ে আরও ৭টি আসন বেশি পেয়ে ৪২টির মধ্যে ২৯ আসন নিয়ে রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে তৃণমূল। যেখানে ৬টি আসন কমে ১৮ থেকে এবার বিজেপির আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ১২ তে। হিন্দুত্ববাদের প্রচার ও নাগরিকত্ব ইস্যু উল্টে তৃণমূলের পক্ষে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এমন পরিস্থিতিতে বিজেপিকে গঠন করতে হবে জোট সরকার। জোটের ছোট ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়বে বিজেপির। এসব দল এখন আরও বেশি দরকষাকষি করার সুযোগ পাবে বিজেপির সঙ্গে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোর আসন বেশি হওয়ায় পার্লামেন্টে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি বিরোধের মুখেও পড়তে হবে বজেপিকে।