আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের একটি ক্লিনিকে বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির জান্তা বাহিনী। বুধবার মধ্যরাতের এই হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। রাখাইনের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি, স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এই খবর দিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে। ২০২১ সালে সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের পর আরাকান আর্মির সদস্যরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করে এই হামলা চালায়। তখন থেকে দেশটির এই অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে।
আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের অনেক এলাকার দখল নেওয়ায় জান্তার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির অন্যান্য প্রান্তেও বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করছে জান্তা বাহিনী।
রাখাইনের কিয়াউকতাও শহরের কাছের ওয়েয়া গি হতান্ট গ্রামের একজন বাসিন্দা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমি গতকাল রাতে যুদ্ধবিমান উড়ে যাওয়ার উচ্চ শব্দ শুনেছি। এরপর মধ্যরাতের দিকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।’’
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এটা বিমান হামলা বলে জানার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়েছিলাম। আমি শুনেছি এই হামলায় বহির্বিভাগের রোগী, চিকিৎসা কর্মী এবং স্থানীয় গ্রামবাসীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
তবে টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, মধ্যরাতের পরপরই জান্তা বাহিনীর হামলায় বহির্বিভাগের রোগী, চিকিৎসা কর্মীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন পাঁচজন। ক্লিনিকটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমও এই হামলার খবর দিয়ে বলেছে, এতে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ওই বাসিন্দা বলেছেন, ওয়েয়া গি হতান্ট গ্রামের কাছে অবস্থিত ক্লিনিকটির পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল আরাকান আর্মি। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী গত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় গোলাবর্ষণ করছে।
রাখাইনে বেশিরভাগ মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্লিনিকে হামলার বিষয়ে জান্তার কাছে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।
মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলের কয়েকটি সশস্ত্র জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একটি আরাকান আর্মি। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াই করছে।
প্রদেশের জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর অধিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য আরাকান আর্মি লড়াই চালিয়ে আসছে বলে দাবি করেছে। গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বলেছিলেন, নভেম্বরে সংঘাত শুরুর পর থেকে রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৫টিতে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত শত শত মানুষ নিহত ও আরও ৩ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।