আফরিন আক্তারঃ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেশের যে কোনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা যাবেু এমন এক অফিস আদেশ নিয়ে তোলপাড় চলছে। সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের এক ধারার ওপর ভিত্তি করে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশটি গত বৃহস্পতিবার জারি করা হয়। এতে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বদলি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
তারা বলছেন, রাজউকের স্থায়ী জনবল হিসেবে তাদের নিয়োগ। এখন চট্টগ্রাম বা সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলির আদেশ জারি কোনোভাবেই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এ অফিস আদেশের পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এতে তৈরি হতে পারে বদলি বাণিজ্যের সুযোগও। কারণ যখনই কাউকে ঢাকার বাইরে বদলি করার সুযোগ থাকবে, তখন এ সুযোগ অসাধু কর্মকর্তারা নিতে পারেন। ফলে প্রতিষ্ঠানও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, রাজউকের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তঃবদলির বিধান আগে থেকেই আছে। অনেকে বিষয়টি জানতেন না। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতেই এ আদেশ জারি করা হয়েছে। বদলি হলে তো কোনো সমস্যা নেই। সুযোগ-সুবিধা তো কারোর কমবে না।
গত ৪ মে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার রাজউকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। রাজউকের ইতিহাসে চেয়ারম্যান পদে কোনো সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার নজির এটাই প্রথম। এ নিয়ে রাজউকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছিল। সম্প্রতি রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফিউল্লাহ বাবুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। এর তিন দিনের মাথায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। সফিউল্লাহ বাবু ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। রাজউকের কর্মচারীরা বলছেন, ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে সতর্কীকরণ, এক থেকে সাত দিনের বেতন কাটা, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাতিল, পদাবনতির মতো কিছু শাস্তিমূলক বিধান আছে। সেগুলো পাশ কাটিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনাও রাজউকে নজিরবিহীন।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘সার্ভিস রুলে যদি ওই রকম বিধান না থাকে, তাহলে এ আদেশ বেআইনি হবে। তবে যদি সব কর্তৃপক্ষ তাদের আইনে পরিবর্তন আনে, তাহলে সম্ভব। আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো বিধান আছে। বিধিতে সুস্পষ্টভাবে না থাকলে বদলি করতে পারবে না।’
এ ব্যাপারে রাজউকের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, আন্তঃবদলির নিয়ম আগে থেকেই রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, পূর্ত মন্ত্রণালয় তো এগুলো আগেই অনুমোদন করে। অফিস আদেশে সেই সূত্রও উল্লেখ আছে। ফলে কাজে গতি আসবে, স্বচ্ছতা বাড়বে। বদলি তো চাকরির একটি অনুষঙ্গ।