রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বাবার সহযোগিতায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পাশে আপনজন বলতে কেউ নেই
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ছবি-মুরগির দোকানের মহাজন ও ধর্ষক আবুল
রাজধানীর ঘনবসতি এলাকা কামরাঙ্গীরচরে বাবার সহযোগিতায় এক বছর ধরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পাশে আপনজন বলতে কেউ নেই। বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহায়তার মামলা করায় সেদিকের কোনও আত্মীয় তার খোঁজ নিচ্ছে না। অপরদিকে মা-বাবার বিচ্ছেদের পর প্রবাসে যাওয়া মা’র সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ নেই কিশোরীর। এই বিপদে চিকিৎসক, পুলিশ ও বাড়িওয়ালার স্বজনরাই তার পাশে রয়েছেন।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক), পুলিশ ও মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে মুরগির দোকানের মহাজন আবুল (৩৫)। আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার ঢামেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরী এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ট্রমায় থাকা ওই কিশোরীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) কাউন্সিলিং চলছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওসিসির তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিলকিস বেগম বলেন, ওই কিশোরীর কাউন্সিলিং চলছে। সে ট্রমায় রয়েছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কাউন্সিলিং দরকার। তার উন্নতি হচ্ছে, তবে ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, বাবার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ করায় বাবার দিকের আত্মীয়রা কেউ ওই কিশোরীর খবর নিচ্ছে না। প্রবাসী মা’র সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তার দিকেরও কোনও আত্মীয়-স্বজন কিশোরীর খোঁজ নিচ্ছে না। ঢাকায় এক ফুফু থাকলেও বাবার বিরুদ্ধে মামলা করায় কিশোরীর ওপর ক্ষেপেছেন তিনি। যার কারণে কিশোরীর ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় থাকলেও হাসপাতালে তাকে একবারও দেখতে আসেননি। এখন সুস্থ হয়ে ওই কিশোরী কোথায় যাবে সেটিও তার অজানা।
কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মশিউর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ধর্ষক আবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওইদিনই সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে কিশোরের বাবা ও মুরগির মহাজন কারাগারে রয়েছে। কিশোরীর ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) কামরাঙ্গীরচরের ব্যাটারিঘাট এলাকা থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। কিশোরী তার বাবার সহায়তায় ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছিল বলে থানায় মামলা হয়েছে। কিশোরী যে বাড়িতে ভাড়া ছিল সেই বাড়ির বাড়িওয়ালার ভাগ্নের স্ত্রীর কাছে সে নিজেই তার বাবা ও আবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।
বিষয়টি ভাগ্নের স্ত্রী তার স্বামীকে জানালে তিনি জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন। এরপর পুলিশ গিয়ে ওই কিশোরীর মুখে ঘটনা জানতে পারে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রথমে তার বাবাকে আটক করে। এরমধ্যে খবর পেয়ে আবুল পালিয়ে যায়।
ওইদিনই কামরাঙ্গীরচর থানায় বাড়িওয়ালার ভাগ্নে বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে কিশোরীকে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। তাকে ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সেখানেই আছে ওই কিশোরী। তবে তার সঙ্গে কোনও আপনজন নেই।
মামলার বাদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিশোরীর সব দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু এই বিপদের সময় মেয়েটির পাশে তার আপন বলতে কেউ নেই। বাবা নিজেই মেয়েকে ধর্ষকের হাতে তুলে দিয়ে কারাগারে, মা বিদেশে। ছোট একটা ভাই রয়েছে ঢাকায় ফুফুর সঙ্গে। বাবার বিরুদ্ধে মামলা করায় ফুফু কিশোরীকে একবারও হাসপাতালে দেখতে আসেনি। ঘটনার দিন তিনি থানায় এসেছিলেন। এরপ আর খোঁজ নেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওর পরিবারের আর কেউ নেই। কাউকে দেখলাম না। আমি শুক্রবার গিয়ে হাসপাতালে দেখে এসেছি। আমার মামার বাড়িতে ওরা দুই মাস ধরে ভাড়া থাকছে। আমার স্ত্রীকে ওই কিশোরী আন্টি বলে ডাকতো। তাকেই এই নির্যাতনের বিষয়টি বলেছে। আমার শুনে খুব খারাপ লাগায় মেয়েটিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেই।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, কিশোরীর বাবা যে মুরগির দোকানে চাকরি করতো সেই দোকানের মহাজন আবুলের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। দীর্ঘদিন টাকা ফেরত দিতে না পারায় আবুল টাকার বিনিময়ে কিশোরীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। কিশোরীর বাবা তাতে রাজি হয় এবং তাকে বাধ্য করে। এতে রাজি না হলে তাকে মারধর করা হতো। প্রায় এক বছর ধরে তার ওপর এমন নির্যাতন হয়েছে। সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার প্রধান দুই আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কিশোরীর চিকিৎসা চলছে। তাকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি।’