রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪

প্রকাশিত: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের ‘শান্তি সমাবেশ’-এর কাছাকাছি রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন।তাদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ নিহতের লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। আহতরা হলেন- মো. আরিফুল (১৮), মো. জোবায়ের (১৮), মো. রনি (৩২), মো. মোবাশ্বের (১৮) ও অজ্ঞাত (২৫)। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের সামনে আওয়ামী লীগের  দুই গ্রুপে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিউজ পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সন্ধ্যার পর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের অদূরে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে একজনের মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। এই দুই গ্রুপের রাজনৈতিক পরিচয় কী, এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারছি না  বলেও জানান ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম বলেন, আমরা শুনেছি গুলিস্তানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। আহত একজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান। তবে কোন দল এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারিনি। তবে ধারণা করছি, কোনও রাজনৈতিক দুই গ্রুপ হতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে ওই গ্রুপ দুটি কামরাঙ্গীরচর থেকে এসেছিল। এর একটির নেতৃত্বে ঢাকা-২  আসনের সংসদ সদস্যের সেকেন্ড ই কমান্ড হিসেবে পরিচিত ও ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। অপরটির নেতৃত্বে ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহীন আহমেদ। ঘটনার সময় শাহীন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা জোট বেঁধে সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণে অবস্থান নেয়। সমাবেশ থেকে ফেরার  পথে প্রতিপক্ষ ঢাকা-২ আসনের সাংসদের সেকেন্ড দিন কমান্ড হিসেবে পরিচিত ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী শাহীন চেয়ারম্যানের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে পথচারীসহ বেশ কয়েকজন হতাহত হন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈকত হাসান বিপ্লব নিউজ পোস্টকে বলেন, সমাবেশ চলাকালে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে শাহীনের অনুসারীদের ওপর ধারালো ছুরি-চাকু, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় ঢাকা-২ আসনের সাংসদ কামরুল ইসলামের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সশস্ত্র ক্যাডার মোহাম্মদ হোসেনের পেটোয়া বাহিনীর সক্রিয় সদস্য জাবেদুল ইসলাম জাবেদ, লালচাঁন সুমন, সাহাবুদ্দিন, ইমন, মেনাজ ওরফে মিরাজসহ ১৫-২০ জন। তাদের এলোপাতাড়ি ছুরির আঘাতে শাহীন চেয়ারম্যানের অনুসারী এক যুবকের মৃত্যু হয়। তবে নিহতের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

শাহিন চেয়ারম্যান অনুসারীরা জানান, একজন সংসদ সদস্যের ছত্রছাঁয়ায় থেকে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়েও গোটা কামরাঙ্গীরচরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। তার একক শাসনে ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর, থানা পুলিশ এমনকি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারি থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও জিম্বি হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে  যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনের রিং বাজলেও রিসিভ না করায় কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের  বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে পুলিশ বলছে, যারাই হামলাকারী হোক না কেন, তাদের কোন দল নেই, তারা সন্ত্রাসী ও অনুপ্রবেশকারী। অতএব এদের থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পল্টন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া।