রাতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বাড়ি নিয়ে যান চালক

প্রকাশিত: ১:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন চালক। এতে কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করলেও কোনো কিছুকেই পরোয়া করেন না তিনি। ওই অ্যাম্বুলেন্স চালকের নাম মাসুদ আহমেদ লিটন। তিনি ফরিদপুর জেলা সদরের ঝিলটুলি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারীতে যোগদানের পরই তাকে কমপ্লেক্সের মধ্যে সরকারি বাসভবন বুঝে দেওয়া হয়েছে। তবুও তিনি প্রতিদিন বিকেল বা সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদরে পরিবারের সঙ্গে রাত্রিযাপন করেন। সকালেও খেয়াল-খুশি মতো ফেরেন তিনি। যে কারণে সরকারি এই জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রত্যাশী রোগীরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া আইনত অপরাধ হলেও ব্যক্তি বিশেষ কোনো কোনো রোগীর স্বজনদের থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মাসুদ আহমেদ লিটন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০২৩ সালের মে মাসে বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। যার মধ্যে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, খেয়াল খুশি মতো দায়িত্ব পালন, নির্ধারিত ভাড়া থেকে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায়, গমন-প্রত্যাগমন রেজিস্ট্রার খাতা লিপিবদ্ধ না করা, সেবা গ্রাহকদের ভাড়ার রিসিট না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নিজের ব্যক্তগত কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার, কর্মস্থলে বায়োমেট্রিক হাতের ছাপ রেজিস্ট্রেশন না করা, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে বায়োমেট্রিক হাতের ছাপ দিতে অনিহা প্রকাশসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পৌর সদরের বাসিন্দা, হোটেল ব্যবসায়ী মো. আলী রেজা জানান, বোয়ালমারী থেকে আমার পরিবারের এক মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে যাই। চালক মাসুদ আহমেদ আমাদের কাছে বেশি টাকা দাবি করে। পরে তাকে একহাজার দুইশ টাকা দিয়ে মিটাই। কিন্তু সে আমাদের কোনো রিসিট দেয়নি। পরে জানতে পারি ভাড়া মাত্র ৮০০ টাকা।

তেলজুড়ি গ্রামের মুন্নী বেগম বলেন, বুধবার সকালে আমার শিশু সন্তানকে ফরিদপুর রেফার করেন ডাক্তার। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন করলে তিনি বলেন ‘আমি ফরিদপুরে। এই মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, আসতে দেড় দুই ঘণ্টা লাগবে। আরও অ্যাম্বুলেন্স আছে তার একটা নিয়ে নেন।’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ী সৈয়দ ওমর আলী জানান, তিনি প্রতিদিনই বিকেলে বা সন্ধ্যার দিয়ে সরকারি গাড়ি নিয়ে ফরিদপুর চলে যান। ফোন করেও তাকে পাওয়া যায় না। মুমূর্ষু রোগীরা বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করেন। আবার আসছি বলে অনেক সময় রোগীদের বসিয়ে রাখেন, যাতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের। এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখি।

এ বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক মাসুদ আহমেদ লিটন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়। রাতে ফরিদপুরে ভাড়া নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কখনো কখনো বাড়িতে থেকে যাই।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাহিদ আল রাকিব বলেন, চালক মাসুদকে ইতোপূর্বে কয়েকটি বিষয়ে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি সেটা আমলে নেননি। সম্প্রতি আরও কিছু বিষয়ে অবগত হয়ে সার্বিক বিষয়ে তাকে দশ কর্মদিবসের মধ্যে কারণদর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।