রাতের বৃষ্টিতে দুপুরেও জলাবদ্ধ রাজধানীর অনেক জায়গা

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম :

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। সড়কে জমে হাঁটু পানি। রাতের বৃষ্টির পর ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি নগরবাসী। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিতে পানি জমে আছে।
এছাড়া পুরান ঢাকাসহ নিম্ন এলাকাগুলোতে অলিগলি এবং ঘরের ভেতরেও পানি আটকে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভোগান্তি এখনও কাটেনি নগরবাসীর।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন রাজধানীর নিউ মার্কেট, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আনন্দবাজার, গুলিস্তান এবং গ্রিন রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও রয়েছে হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর পরিমাণ পানি। কয়েকটি জায়গায় সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিমকে কাজ করতে দেখা গেলেও জনবল ছিল খুবই কম।


দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংলগ্ন রাস্তায় দেখা যায়— মাঝে মাঝে যেন স্রোত বইছে। হলবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের হলগুলোতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে হলে।
রাজধানীর আজিমপুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন গলি, দোকানপাট এবং বাসা বাড়ির নিচতলাতেও বাসিন্দারা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। তবে আশপাশের ড্রেনগুলোতে পানি জমে যাওয়াতে পানি সরানোর চেষ্টা করেও কোনও লাভ হচ্ছে না।

লালবাগের ৮ নাম্বার গলির বাসিন্দা সাখাওয়াত আলী জানান, রাতের বৃষ্টির পর মধ্যরাতে তাদের গলি ভেসে বাসায় পানি আসতে শুরু করে। বিভিন্নভাবে পানি আটকানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি থামার পর পানি অপসারণের জন্য ছোট বালতির মাধ্যমে অনেকক্ষণ চেষ্টা করে মোটামুটি ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা করা গেছে।

একই এলাকার মুদি দোকানি শাহ আলম খোকন বলেন, রাতের বৃষ্টিতে দোকানে পানি ঢুকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মুদি মালামাল ভিজে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও পানি সরাতে না পেরে অনেক মালামাল ফেলে দিতে হয়েছে।
নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতর-বাইরে এখনও কোমর সমান পানি। মিরপুর সড়কেও রয়েছে পানি। ঝিগাতলা থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অংশে দুপুর পর্যন্তও পানি নামেনি। এসময় দেখা যায়- প্রায় প্রতিটি দোকানেই প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। নিচু দোকানগুলো প্রায় অর্ধেক অংশ পানির নিচে। নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল।


এদিন পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, চাঁনখারপুল লেন ও নিমতলী এলাকা ঘুরে জলাবদ্ধতার এমন চিত্রই দেখা গেছে। আগের রাতের বৃষ্টিতে পরদিন দুপুরেও পানিবন্দি পুরান ঢাকার মানুষ।
সকালে চাঁনখারপুল লেন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙারির দোকানে কয়েকজন কর্মচারী পানি অপসারণ করছেন। পানি ঢুকে দোকানের বিভিন্ন মালামাল ভিজে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সড়ক উপচে দোকানের ভেতর পানি ঢুকেছে। সকাল থেকে তারা পানি অপসারণের পাশাপাশি মালামাল সরানোর কাজ করছেন।

ওই দোকানের মালিক বায়েজিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমার পরই দোকানে পানি ঢোকে। সকাল পর্যন্ত অনেক পানি নেমে গেছে। তবে কিছু পানি এখনো রয়েছে। ড্রেনের পানি দ্রুত না সরায় সড়কের পানিও সরছে না। ড্রেনের পানি নামলে দোকানপাটের পানিও নেমে যাবে।
নাজিমুদ্দিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সড়কের পাশে জমিয়ে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা একাকার হয়ে গেছে। রাত থেকে নোংরা পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন মানুষ। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ দোকানে পানি ঢুকেছে।
সেখানে চাঁনখারপুল লেনের বাসিন্দা আব্দুর রাজি জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। যে কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে পারে না।

লধমড়হবংি২৪

হোসাইনী দালাল রোডে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পর ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। পানি সরছে না প্রধান সড়ক থেকে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।

তানজিম হোসেন রায়হান নামের এক দোকানি জাগো নিউজকে বলেন, রাতে বৃষ্টি হয়েছে, অথচ দুপুর গড়ালেও পানি নামছে না। কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। সকাল থেকে দোকানেও কাস্টমার কম।

লধমড়হবংি২৪

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বাবলু হাওলাদার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা হতো না। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে আরও তদারকি করা দরকার।
সকালে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মচারী মোহাম্মদ বিল্লাল মিয়া বলেন, ঘুরে ঘুরে দেখছি পানি কোথায় জমা আছে। পানি দ্রুত নামছে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পানি নামতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। শুধু আমাদের ওয়ার্ডেই নয়, ঢাকা সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনো পানি জমে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাত থেকেই তাদের কুইক রেসপন্স টিম মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া শুক্রবার সাধারণ ছুটি হলেও তারা তাদের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ বিভাগ কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নাম্বারে নগরবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সমস্যার সমাধানে দুই সিটি করপোরেশনই নগরবাসীর সাহায্য চেয়েছে।