রিয়ালের হোসেলুর গোল কেন বৈধ, বায়ার্ন কেন গোল পেল না?

প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২৪

খেলাধুলা ডেস্ক:

আরও একবার বিতর্ক আর উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ দেখল সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিদায় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখনই লোন ডিলে আসা হোসেলু মাতো দেখালেন জাদু। বছরদুয়েক আগেও ভক্ত হিসেবে দেখতে গিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ম্যাচ। আর আজ নিজেই প্রিয় ক্লাবকে তুললেন ফাইনালে।

কিন্তু হোসেলু মাতোর জোড়া গোল ভেস্তে যেতে পারত শেষের নাটকে। ম্যাথিয়াস ডি লিট প্রতি আক্রমণে বায়ার্নের হয়ে বল জালে জড়িয়েছেন। সেটা গোল হতেও পারত, তবে লাইন্সম্যান আগেই তুলেছেন অফসাইডের পতাকা। পোলিশ রেফারি মার্সিনিয়াক ভিএআর চেক করতে গিয়েও শেষমুহূর্তে গোল চেক করতে গিয়েও যাননি। ৫ সেকেন্ডের ওই নাটককে নিজেদের বিদায়ের জন্য দায় দিচ্ছেন বায়ার্ন মিউনিখের খেলোয়াড়-কোচ থেকে শুরু করে ভক্তরাও।

এমনকি ম্যাচশেষে লাইন্সম্যান ক্ষমাও চেয়েছেন ম্যাথিয়াস ডি লিটের কাছে। তাই একটা কিছু ভুল ছিল, সেটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু বার্নাব্যুর উত্তাল সেমিফাইনালে ভুল কী ছিল? ঠিকই বা কে? বায়ার্ন মিউনিখ কি সত্যিই অবিচারের শিকার হয়েছে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে?

৯ মিনিটের অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে খেলা চলছে ১২ মিনিটে। জশুয়া কিমিখের বাড়ানো বল রিসিভ নুসেইর মাজরাউই। মরক্কোর এই ডিফেন্ডার বল পেয়েছিলেন ফার্লান্দ মেন্ডির ভুলে। বল পায়ে পাওয়ার পরেই লাইনসম্যান লিসকেউইৎজ। এরপরেই হাল ছেড়ে দেন রিয়ালের দুই ডিফেন্ডার অ্যান্টোনি রুদিগার এবং কামাভিঙ্গা। কিন্তু মাজরাউই বল বাড়ান টমাস মুলারের দিকে। তার হেড থেকে ভলিতে গোল করেন ম্যাথিয়াস ডি লিট।

গোলের পরই অফসাইড চেক করার জন্য আবেদন জানান বায়ার্নের খেলোয়াড়রা। রেফারি মার্সিনিয়াক নিজেও ছুটেছিলেন ভিএআরের দিকে। তবে শেষ সেকেন্ডে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু কেন?

মূলত লাইনসম্যান অফসাইডের সংকেত দেন মাজরাউই বল পাওয়ার পরেই। নিয়ম অনুযায়ী, সেখানেই ম্যাচ শেষ। ডি লিটের বল যখন জালে জড়িয়েছে, তখন প্লে-অন ছিল না। যার ফলে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, সেটা কখনোই ভিএআর যাচাইয়ের উপযুক্ত না।

লাইনসম্যানের সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিল?
প্রশ্নটা যদি করা হয় লাইনসম্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে। তবে বড় রকমের ধাক্কা খেতেই হবে বায়ার্নের ভক্তদের। ভিএআর চেক না করা হলেও সেমি-অটোম্যাটেড প্রযুক্তির মাধ্যমে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সেই সময়ের ফুটেজ নিয়ে এসেছে টিএনটি স্পোর্টস এবং বিইন স্পোর্টস। তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, বল যখন দেয়া হচ্ছিল, সে সময় মাজরাউই অফসাইডে ছিলেন না। তবে গোলদাতা ডি লিট অফসাইড কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। অ্যান্টোনি রুদিগারের বাড়ানো হাত এবং ডি লিটের মাথা প্রায় একই সমান্তরালে ছিল।

লাইন্সম্যান যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় রকমের ভুল করেছিলেন, এতে তাই সন্দেহ থাকছে না। ডি লিটের দাবি, লাইনসম্যান ঘটনার জন্য তার কাছে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন, ‘লাইনসম্যান আমাকে বলেছেন দুঃখিত, ভুল করেছি।’

এমন ঘটনা লজ্জার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, অফসাইড নিশ্চিত না হলে…খেলা চালিয়ে যেতে হবে। আর শেষ মিনিটে এভাবে বাঁশি বাজানো, আমার মনে হয় এটা বড় ভুল। অফসাইড হয়েছে কি না, আমি জানি না, সেটা ভিএআর পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু এটা (অফসাইড) পরীক্ষা করে না দেখলে বুঝলেন কীভাবে? এটা লজ্জার।’

খেলা কেন বন্ধ করা হয়েছিল?
২০১৬ সালে ভিএআর আসার পর থেকেই নিয়ম অনুযায়ী, লাইনসম্যান সম্ভাব্য অফসাইডের ক্ষেত্রেও খেলা চালিয়ে যাবেন। বল যতক্ষণ খেলার মাঝে থাকবে, ততক্ষণই খেলা চলতে থাকবে। গোল হলে বা বল গোললাইন অতিক্রম করলে জানানো হবে অফসাইডের সিদ্ধান্ত। এরপরেই আপত্তির সাপেক্ষে, গোল হলে সেটা চেক করবেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি এবং মাঠে থাকা রেফারি।

কিন্তু গতকাল মাজরাউই বল রিসিভ করার পরেই লাইনসম্যান লিসকেউইৎজ অফসাইডের সংকেত দিয়ে বসেন। যার কারণে ম্যাচ চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না সিমোন মার্সিনিয়াকের জন্য।

ম্যাচ শেষে বায়ার্নের প্রতিক্রিয়া কী?
গোলটি করা বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডি লিট ডিফেন্ডার মিক্সড ম্যাচ জোনে হতাশা প্রকাশ করেছেন গোলের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলতে চাই না যে, রিয়ালের পক্ষেই সবসময় রেফারি থাকে। তবে আজ ওটা বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। এটাই রিয়াল, যখন আপনি ভাববেন ওরা শেষ হিয়ে গিয়েছে, আর একটামাত্র শ্বাস নেওয়া বাকি… এজন্যই ওরা ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দল।’

বিষয়টি একেবারেই মানতে পারছেন না বায়ার্ন কোচ থমাস টুখেল, ‘এটা যাচ্ছেতাই। একেবারেই যা তা। আর নিশ্চিতভাবেই ফুটবলের আইন ভঙ্গ করেছে। নিয়ম বলছে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম ভুল করেছে লাইন্সম্যান। পরের ভুলটা করেছে রেফারি। এমন একটা পরিস্থিতিতে, যখন আপনি একেবারেই নিশ্চিত না যে অফসাইড হচ্ছে, তখন আপনি কখনোই অফসাইডের পতাকা তুলতে পারেন না। কোনোভাবেই না। এমন একটা পরিস্থিতিতে, এতটা সাহস নিয়ে অফসাইড ডাকা, সত্যিই অনেক বড় কিছু।

বার্নাব্যুতে খেলা না হলে, রেফারির সিদ্ধান্ত এমন হতো না বলেও দাবি টুখেলের, ‘রেফারি যখন দেখেছেন আমরা সেকেন্ড বল পেয়েছি, রিবাউন্ড পেয়েছি আর শট করেছি, সবকিছুই ৫ সেকেন্ডের মধ্যে হয়েছে। তার সুযোগ ছিল বাঁশি না বাজানোর। কিন্তু তিনি বাঁশি বাজানোর সিদ্ধান্ত নেন। আমি দুঃখিত (এভাবে বলার জন্য), তবে এটা সব ধরনের আইনের বিরুদ্ধে। আমরা মেনে নিচ্ছি আমরা হেরেছি। এটাই চূড়ান্ত। তবে বিষয়টা অন্যপ্রান্তে হলে সিদ্ধান্ত এমন হতো না।’

ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে ক্ষোভ উগরে দেন মুলারও, ‘রেফারি ভিএআরের সাহায্য নেয়নি। তিনি এটা দেখার সুযোগও পাননি। এমন পরিস্থিতি খুব অদ্ভুত, এত দ্রুত বাঁশি বাজালেন! অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত। সাধারণত বাঁশি বাজানোর আগে তিন মিটার দৌড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। জানি না আসলে কী ঘটেছে। দুঃখজনকভাবে মাদ্রিদে এটা প্রায়ই হয়। ২০১৭ সালেও আমাদের সঙ্গে এটা ঘটেছে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দুই গোল করেছিল…তবে সেটা ভিএআরের আগে।

হোসেলুর গোলের সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিল?

রিয়াল মাদ্রিদের গোল নিয়েও যে বিতর্ক নেই তা নয়। হোসেলুর গোলটাও বৈধতা পেয়েছিল ভিএআর যাচাইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু, হোসেলুর সেই গোল কেন বৈধ? উত্তরটা সহজ, রিয়ালের এই ফরোয়ার্ড বল পেয়েছিলেন দ্বিতীয় পাসের হিসেবে। মাঝমাঠ থেকে রুদিগারের উদ্দেশ্যে বল বাড়ানোর সময় তিনি অফসাইডে থাকলেও, রুদিগারের পাস যখন দেয়া হয়, তখন অনসাইডেই ছিলেন তিনি।