নিজস্ব প্রতিবেদক:

বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় ‘রিসিভার’ নিয়োগ করতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে শুধু বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে তা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এ-সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়ে এই আদেশ দিয়েছেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এতে বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করতে এবং গ্রুপটির কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়।

গত ১ অক্টোবর লিভ টু আপিলটি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও মুস্তাফিজুর রহমান খান। রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান নিজে শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফাতেমা এস চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান।

আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, হাইকোর্টকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এ জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে রিসিভার নিয়োগের যে আদেশ, তা স্থগিত থাকবে শুধুমাত্র বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের জন্য। ফলে এই সময়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে কোনো রিসিভার বসছে না।
গত ২৫ বছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্য সব ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিশোধের পর ঋণ মওকুফ বিষয়ে তথ্যাদি সরবরাহ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান আবেদনকারী হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিটটি করেন।

শুনানি নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। অপর নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ আদায় করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে শুধু রিসিভার নিয়োগসংক্রান্ত নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিভ টু আপিলটি করে। লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আজ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশ থেকে জানা যায়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের অন্য সব ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ ঋণ অপরিশোধিত আছে, ঋণের বর্তমান অবস্থা ও রিপেমেন্টের (পরিশোধ) তথ্য দিতে এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে সেসব ব্যবস্থাপনায় রিসিভার নিয়োগ বিষয়ে রুল দেওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন কারাবন্দী। পোশাক রপ্তানি ও ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বেক্সিমকো।

শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে ইতিমধ্যে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।