রোহিতের মুকুটে আরেকটি পালক

প্রকাশিত: ১২:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫


ক্রীড়া ডেস্ক:

 

পাঁচ ফুট ৯ ইঞ্চির উচ্চতার কারও ওজন ৬৫.৩ থেকে ৭৯.৮ কেজি হয়ে থাকে। সেই হিসাবে রোহিত শর্মার ৭২ কেজি ওজন অন্তত বাড়াবাড়ি কিছু নয়। কিন্তু যা হয় আর কি, প্রত্যাশামতো পারফরম্যান্স না হলে লোকে তাঁর ওজন নিয়েই কথা বলে থাকে। এতদিন আড়ালে-আবডালে থাকলেও কিছুদিন আগে ভারতের কংগ্রেস মুখপাত্র শামা মুহাম্মদের একটি এক্স হ্যান্ডেল বার্তা তাতে ঝড় তোলে। শামা তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে রোহিতকে ‘মোটা’ বলে সমালোচনা করেন। যার উত্তরে সুনীল গাভাস্কার এক টকশোতে বলেন, ‘যদি শুধু চিকন ছেলেদের চান, তবে মডেলিং প্রতিযোগিতায় গিয়ে মডেলদের বেছে নিন। ক্রিকেট মাঠে দরকার পারফরম্যান্স, চেহারা নয়। বড় ইনিংস খেলতে গেলে মানসিক দৃঢ়তা থাকা সবচেয়ে জরুরি। কেউ কতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারে, কত ভালো ব্যাট করতে পারে– সেটাই আসল বিষয়।’

পোড়খাওয়া গাভাস্কারের কথাগুলোই আরেকবার সত্য প্রমাণিত করে দিলেন রোহিত শর্মা। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চেই হাত খুললেন তিনি ৮৩ বলে ৭৬ রান করে। বিশ্বসেরার মঞ্চে গত বছরের টি২০ বিশ্বকাপের পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের মুকুট পরে নিলেন তিনি।

রোহিতের টস ভাগ্য খারাপ হতে পারে, তা না হলে টানা ১২ ম্যাচে টস হেরে কেন তাঁর নাম বসবে লারার পাশে। ক্যাচ ফেলানোতেও বেখেয়ালি হতে পারেন, তা না হলে ড্যারেল মিচেলের ক্যাচ কেন পড়বে তাঁর হাত থেকে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মাঠে তাঁর অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। সে কারণেই তিনি একমাত্র অধিনায়ক, যিনি কিনা আইসিসির ভিন্ন ভিন্ন চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দলকে নিয়ে গেছেন এবং যার দুটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। হয়তো মাহেন্দ্র সিং ধোনির মতো তাঁকে কেউ ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলেন না। তবে বিরাট কোহলি ও রোহিতদের এই দলটি যেভাবে গত তিন বছর ধরে দলকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন, তাতে ‘ক্যাপ্টেন হিটম্যান’ বলা যায় তাঁকে। তবে ফাইনালের এই মঞ্চ ঘিরে একটি বিশাল অপূর্ণতা ছিল তাঁর।

গত ১৮ বছর ধরে আইসিসির আটটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে একটি হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না রোহিতের ব্যাটে। ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩০, ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ৯, ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ম্যাচে ২৯, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য, ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ ও ৩০ রানে আউট হয়েছিলেন। এর পর ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দুই ইনিংসে ১৫ ও ৪৩, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ৪৭ রানের পর গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে করেন মাত্র ৯ রান। ফাইনালে কোথায় গিয়ে যেন আটকে যায় রোহিতের ব্যাট। অবশেষে সেই আক্ষেপ পূরণ করে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। তবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও হারিয়েছেন এদিন।

আসলে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে ওডিআই খেলেছেন রোহিত। ২০২৪ সালে মাত্র তিনটি ওডিআইয়ে দেখা গেছে তাঁকে। এবার অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির কারণে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেমেছিলেন নেতৃত্ব দিতে। কটকে ইংলিশদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও যেন মন ভরেনি অনেকের। তাই যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪১, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ রান করলেন; তখন সেই আবার ফিসফাস– সব তো বাকিরাই করছেন, অধিনায়ক করছেন কী?

এই প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন গতকাল ফাইনালে। শুভমান গিলকে নিয়ে রোহিত শুরুতে তাঁর ‘হিটম্যান’ মেজাজে ৪১ বলে ফিফটি করার পর যখন ১০৫ থেকে ১০৬ রানের মধ্যে গিল আর কোহলি আউট হয়ে যান, তখন ৬৯ রানে থাকা রোহিত কিছুটা শ্লথ খেলায় মনোযোগী হন। কিন্তু ‘হিটম্যানের’ কি আর ওভাবে চলে, তাই রাচিনকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উইকেট দিতে হয় তাঁকে।