লন্ডনে জয়শঙ্করের ওপর হামলার চেষ্টা, ছেঁড়া হলো ভারতের পতাকা

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৫

ডেস্ক  রিপোর্ট:

যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের সামনে হামলাকারীরা তার গাড়ির কাছে চলে যান এবং হামলার চেষ্টা চালান। এছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডনে খালিস্তান আন্দোলনের যুক্ত একদল কর্মীর ক্ষোভের মুখে পড়ার পর এই ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ওপর ওই হামলার নেপথ্যে রয়েছেন খলিস্তানপন্থি কর্মীরা। বুধবার রাতে লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। খলিস্তানপন্থিরা পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন অদূরে রাস্তার ওপর। পুলিশের সামনেই সেখানে তারা ভারত-বিরোধী নানা স্লোগান দেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, জয়শঙ্কর কর্মসূচি শেষে বের হওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের ভিড় থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎই ছুটে তার গাড়ির সামনে পৌঁছে যান। এরপর কনভয়ের সামনেই ভারতের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন। এসময় আরও কয়েক জন খলিস্তানপন্থি কর্মী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কনভয়ের কাছে এসে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও কিছুক্ষণ পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যায়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, এই ঘটনায় জয়শঙ্করের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক গাফিলতি স্পষ্ট হয়েছে।

এই হামলার নেপথ্যে খলিস্তানপন্থি নেতা গুরপতবন্ত সিং পন্নুনের সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। অতীতে এই সংগঠনের সদস্যরা ব্রিটেনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দুরাইস্বামীর ওপর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় আলবার্ট ড্রাইভের গুরুদ্বারে হামলা চালিয়েছিল।

এছাড়া লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও হামলার চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে এসএফজের বিরুদ্ধে।

ব্রিটেন সফরে গিয়ে বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ভারতের জয়শঙ্কর। আলোচনা হয় দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও।

প্রসঙ্গত, শিখ ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মগুলোর একটি। বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের ভূখণ্ডের মধ্যে ভাগ হয়ে থাকা পাঞ্জাবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় পাঞ্জাবকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল।

বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় আড়াই কোটি শিখ ধর্মাবলম্বী আছেন এবং ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। এদের বড় অংশই বাস করেন ভারতে। দেশটির মোট জনসংখ্যার আড়াই শতাংশ এখন শিখ। আবার শিখদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো বিভিন্ন দেশে অভিবাসীও হয়েছেন।

মূলত ভারতের শিখদের আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নাম– খালিস্তান মুভমেন্ট বা খালিস্তান আন্দোলন। ভারতের পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে এ আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এর জের ধরে সেসময় অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং মৃত্যু হয় হাজারও মানুষের।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত ও বিতর্কিত সামরিক অভিযানের পর সেসময় এ আন্দোলন স্তিমিত হলেও বিদেশে অভিবাসী শিখদের একটি অংশ আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে তাদের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আন্দোলন কিছুটা জোরদারও হয়েছে।