পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৃহস্পতিবার দেশটির জাতীয় সংসদে দেওয়া এক ভাষণে আল কায়দার সাবেক শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কের অবনতি বিষয়ে পাকিস্তানের সংসদে কথা বলার সময় এই মন্তব্য করেন তিনি। এরপর দেশটির বিরোধীদলগুলো ওই মন্তব্যের কারণে ইমরান খানের তীব্র সমালোচনা করে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে ‘আঞ্চলিকভাবে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’র জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে উল্লেখ করে। এরপর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এই অঞ্চলে আল কায়দার শক্তি অনেক কমেছে বলে স্বীকার করা হলেও, আল কায়দাকে ধ্বংস করার পেছনে পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকাকে উপেক্ষা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।’
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওসামা বিন লাদেনের প্রসঙ্গ তোলেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) সমর্থন দিয়েছি ও তার বিনিময়ে আমার দেশকে যে পরিমাণ অপমান সহ্য করতে হয়েছে, আমার মনে হয় না সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে কোনো দেশকে কখনো এতটা অপমানিত হতে হয়েছে।’
মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে দেশটির ভেতরে অভিযান চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইমরান খান বলেন, ‘তারা অ্যাবোটাবাদে এসে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে, শহীদ করে দেয়। আমাদের মিত্র আমাদের অজ্ঞাতে আমাদের দেশের ভেতরে ঢুকে একজনকে মেরে ফেলে ও আমাদেরকেই জানায় না। আর এরপর পুরো পৃথিবীর মানুষ আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। সে সময় পৃথিবীর যত দেশে পাকিস্তানিরা ছিল, তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
এই মন্তব্যের পর সংসদে ইমরানের সমালোচনা করেন বিরোধী দল পিএমএল-এন’এর সিনিয়র নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। ওসামা বিন লাদেনকে চরম সন্ত্রাসী উল্লেখ করে খাজা আসিফ বলেন, ‘সে (ওসামা বিন লাদেন) আমার দেশকে ধ্বংস করেছে, আর তিনি (ইমরান খান) তাকে শহীদ বলছেন।’
আল কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে মার্কিন বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান। ওই সময় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর হেলিকপ্টার পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালালেও পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে জানতো না। অ্যাবোটাবাদে ওই অভিযানের সময় ক্ষমতায় ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টি। ইমরান খানের বিরুদ্ধে সহিংস সন্ত্রাসবাদের প্রশংসা করার অভিযোগ তুলেছেন দলটির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের খবর উঠে এসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম। তবে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। এ ছাড়াও ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমও ইমরান খানের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করেছে।
আর ইমরান খানের ওই মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী শাহবাজ গিলের করা একটি টু্ইট পাকিস্তানের পত্রিকা ডন তাদের রিপোর্টে ব্যবহার করেছে। টুইটে শাহবাজ বলেন, ”ইমরান খানের মন্তব্যকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে। ওসামা বিন লাদেনকে তিনি একবার শহীদ বললেও তার বক্তব্যে দুইবার ‘হত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।”