লিবিয়ায় আটকে রেখে ২৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, মা-বাবার আকুতি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নোয়াখালি প্রতিনিদিঃ
তিন বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঋণ করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান নোয়াখালীর মো. আব্দুর রব (২৫)। দীর্ঘ ১২ দিন নিখোঁজ থাকার পর অপরিচিত নম্বর থেকে নির্যাতনের অডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ২৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মাফিয়া চক্র। সন্তানের এমন নির্মম নির্যাতনের পরিস্থিতি জানতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা।
ভুক্তভোগী মো. আব্দুর রব নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাড়ির মো. আব্দুর রহিমের ছেলে।
জানা যায়, ২০২২ সালে আব্দুর রব লিবিয়ায় পাড়ি জমান। তারপর ছোট ভাই আব্দুর রহমানকেও (২৩) লিবিয়ায় নিয়ে যান আব্দুর রব। সেখানে আল খামাছ পৌরসভায় একটা কোম্পানিতে দুই ভাই চাকরি করতেন। গত ১৪ জানুয়ারি কাজের উদ্দেশ্যে মিসালতা যাওয়ার সময় ভুয়ারা চেকপোস্টে পুলিশ আব্দুর রব, আব্দুর রহমানসহ মোট ৪ জনকে আটক করে। তারপর কাগজপত্র চেক করে তিনজনকে ছেড়ে দিলেও আব্দুর রবকে পুলিশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে ত্রিপলি থানা পুলিশের কাছে আছে বললেও খোঁজখবর নিয়ে সেখানে আব্দুর রবের সন্ধান পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ১২ দিন পর ২৬ জানুয়ারি একটি বাংলাদেশি ইমো নম্বর থেকে মাফিয়া চক্র জানায় আব্দুর রবকে তারা ২০ লাখ টাকায় পুলিশ থেকে কিনে নিয়েছেন। তাদেরকে ২৬ লাখ টাকা দিলে তারা আব্দুর রবকে ছেড়ে দেবেন। এরপর থেকে বাড়তে থাকে নির্যাতনের চিত্র। সেই নির্যাতনের অডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দ্রুত টাকা দেওয়ার জন্য দেওয়া হয় বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কয়েকটি নম্বর। ভিটেমাটি ছাড়া আব্দুর রবের বাবার কিছু নাই বলে আর্তনাদ করেই দিন পার করছেন।
আব্দুর রবের মা তাজনাহার বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামীর দুই শতাংশের বসতভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা আমার ছেলেকে মেরে আমাকে ভিডিও অডিও কল দেয়। আমার বুকটা ফেটে যায় কিন্তু আমি তো অসহায় মা। আমার কিছুই করার নাই। আমি ড. ইউনূস স্যারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমার সন্তানকে আমি ফেরত চাই।
আব্দুর রবের বড় বোন জান্নাতুল নাইম সোনিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুই ভাই, দুই বোন। আমি বড় সন্তান তারপর আব্দুর রব। সুদের ওপর টাকা নিয়ে দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। মাফিয়া চক্র একটি ঘরে বন্দি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার ভাইকে নির্যাতন করে আমাদের কাছে ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে নির্যাতন করে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। নিয়মিত ফোন দিয়ে চক্রটি আমার ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখায়। নির্যাতনের দৃশ্য দেখতে না পেরে আমরা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমার বাবা-মা অজ্ঞান হয়ে যান।
আব্দুর রবের বাবা আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ কোনো কাজ করতে পারি না। মাফিয়া চক্র ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে অথচ ২৬ হাজার টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নাই। সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে ঋণ করেছি তার টাকা আজও পরিশোধ করতে পারিনি। সন্তানের এমন নির্যাতনের অডিও-ভিডিও দেখলে জ্ঞান থাকে না। ড. ইউনূস স্যারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমরা সারাজীবন উনার জন্য দোয়া করব।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বাবুল ও মো. বাহার মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপহৃত আব্দুর রব অত্যন্ত নম্র ভদ্র ছেলে। লিবিয়ার পুলিশ দালালদের কাছে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশিরা আছে। তারা তাদের দেশি বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছে। যদি সরকার যাচাই-বাছাই করে তাহলে মাফিয়া চক্রটিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। তাহলে এভাবে কোনো মা-বাবার সন্তানকে নির্যাতিত হতে হবে না আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্যার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
নোয়াখালী ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিষয়টা যেনে মর্মাহত হয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবার আমাদের অফিসে একটা অভিযোগ জমা দিয়েছে। সেটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়া দূতাবাসের কাছে প্রেরণ করা হবে। আশা করি সরকার এই রেমিট্যান্স যোদ্ধার পাশে দাঁড়াবে। তাতে সন্তান তার বাবা-মায়ের কাছে আসতে পারবে