শতবর্ষী রেলস্টেশনটি এখন গোচারণ ভূমি

প্রকাশিত: ১২:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪

উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

এক সময়কার ব্যস্ততম রেল স্টেশনটি এখন সুনসান। ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও স্টেশন বন্ধ থাকায় থামে না। ফলে নেই কোলে কোলাহল। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এভাবে অজত্ন হয়ে পড়ে রয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে অবস্থিত শতবর্ষী মিরসরাই রেলস্টেশনটি। বন্ধ হওয়ার পর থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা ও মূল্যবান মালামাল। পুনরায় চালু হবে এ স্টেশন এমন আশায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জনমানবহীন স্টেশনের কক্ষগুলোতে চলছে গরু-ছাগল পালন, জুয়ার আসর ও মাদকসেবীর আড্ডা। স্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। বেদখল হয়ে রয়েছে অনেক জায়গা। রেলস্টেশনের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পাহারাদারও চোখে পড়েনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪৯ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। আসাম বেঙ্গলে রেলওয়ে থাকাকালীন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ স্টেশনে নিয়মিত ট্রেন থামতো। ফলে পুরো উপজেলার মানুষ ছিল ট্রেননির্ভর। ভ্রমণ, সবজি, ফলমূল আমদানি-রফতনিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে ট্রেনই ছিল প্রিয় পরিবহন। একসময় এসব স্টেশন থেকেই ভারত, পাকিস্তানে মালামাল আনা নেওয়া হতো।

কিন্তু ২০০৮ সালে আয় কমে যাওয়া ও লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মিরসরাই সদর রেলস্টেশন উন্নয়ন কার্যক্রম শেষে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা এই রেল স্টেশনটি চালু করার জন্য রেল স্টেশনে আধুনিক সিগন্যালিং, নতুন ডিজিটাল কক্ষ নির্মাণ, লাইন সংস্কারসহ বিভিন্ন আধুনিকায়ন কাজ শেষ করা হায়। কিন্তু পরে আবারো থেমে যায় কার্যক্রম।

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান নামে একজন বলেন, স্টেশনটি যখন চালু ছিল, তখন গোডাউনের মালামাল নেওয়ায় এক প্রকার জমজমাট ছিল। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের যাতায়াতের জন্য এই স্টেশন ছিল অন্যতম। স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফয়সাল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমার বাপ-দাদারা ট্রেনযোগে চলাচল করতেন। তখন উনাদের যাতায়াতের জন্য অন্যতম বাহন ছিল ট্রেন। আমার বাবা এই ট্রেনযোগে প্রতিদিন সকালে অফিসে যেতেন, আবার অফিস শেষে বাড়ি ফিরতেন। আমার বাসযোগে অফিসে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় রাস্তায় যানজট থাকে, সময়মতো অফিসে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। স্টেশনটি চালু হলে এলাকার মানুষের উপকার হতো।

এ বিষয়ে চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটা স্টেশন বন্ধ থাকলে তার পরবর্তী স্টেশনটির সঙ্গে প্রোপার সিগন্যাল পাওয়া যায় না। যার ফলে ট্রেন নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল করতে পারে না। ফলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে রেল যেতে বিলম্ব হয়।তিনি আরও বলেন, মিরসরাই রেল স্টেশনটি খুব তাড়াতাড়ি চালু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের (পূর্ব) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, মূলত লোকবল স্বল্পতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে বন্ধ হওয়া বিভিন্ন স্টেশন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি তারই ধারাবাহিকতায় মিরসরাই স্টেশনটি পর্যায়ক্রমে চালু হবে।