জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে শরীয়তপুরে জমজমাট হয়ে উঠে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জোড় মাছের মেলা। এই মেলায় সকলের ইচ্ছে থাকে জোড় ইলিশ ক্রয় করা। তবে শুধু ইলিশই নয়, অন্যান্য মাছের জোড়ও ক্রয় করেন ক্রেতারা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলাটি কত বছর আগে থেকে প্রচলন শুরু হয়েছে তা জানেন না অনেকেই। তবে ধারণা করা হয়, অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো পৌষ সংক্রান্তির এই মেলা। প্রথম দিকে মেলায় শুধু ইলিশ মাছ বিক্রি হলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মেলায় বিক্রি শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন খাবারের দোকান ও খেলনার দোকান যুক্ত হয় মেলায়। পুরো বছরজুড়ে এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন এখানকার স্থানীয়রা। মেলা উপলক্ষ্যে আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের সমাগম ঘটে। মেলা উপলক্ষ্যে এখানকার মানুষ তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। মেলায় বড়দের চেয়ে ছোটদের আগ্রহ থাকে বেশি। শিশুরা বড়দের সঙ্গে মেলায় গিয়ে মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি রং-বেরঙের বেলুন ও খেলনা ক্রয় করে। হাতে খেলনা আর বাঁশি বাজিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফেরে তারা
অপু দাস নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলায় ছোট-বড় সবাই খুব আনন্দ করে। ছোটরা আমাদের সঙ্গে মেলায় আসে, খেলনা কিনে মিষ্টি খেয়ে বাড়ি ফিরে। মেলায় অধিকাংশ মানুষ জোড় ইলিশ মাছ কিনে থাকে। আমিও জোড় ইলিশ কিনব।
মেলায় টেরাকোটা বিক্রি করা চাঁন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মেলা আমাদের বাপ-দাদার আমলের আগে থেকে চলে আসছে। আমি ১২ বছর ধরে মেলায় মাটির মালামাল বিক্রি করি। এই মেলা আমাদের ঐতিহ্য। আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই।
খবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে এই মেলায় আসতাম। আমার বাবার মুখে শুনেছি তিনিও নাকি তার বাবার সঙ্গে মেলায় আসতেন। আমিও আজ আমার বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় এসেছি। খেলনা কিনে দিলাম, এখন মাছ কিনে বাসায় ফিরব। এ যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মেলবন্ধন।
মনোহর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অঞ্চলের দুই শ বছরের ঐতিহ্য এই জোড় মাছের মেলা। প্রতি বছর এই দিনে মনোহর বাজার মাঠে ভোরবেলা থেকেই ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়। সবাই মেলায় এসে মাছ কিনেন। এই মেলার মাধ্যমে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত হয়। মেলার সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।