শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বাল্য বিবাহ রোধে আইনের যথার্থ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নগরীর পরিবেশ দূষণ রোধ ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বায়ুদূষণ রোধ এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে আরবান শিশু ফোরাম আয়োজিত ‘আমরা বলতে চাই, আমাদের কথা শুনুন’ শীর্ষক সংলাপে অংশগ্রহণকারী জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, গণমাধ্যমকর্মী ও উন্নয়নকর্মীরা এ সুপারিশ করেন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তায় আজ ঢাকার মটস মিলনায়তনে শতাধিক শিশু-কিশোর-অভিভাবক-উন্নয়নকর্মীর উপস্থিতিতে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা এমপি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত, আগামী দিনের নেতা। এরাই একদিন দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হবে। দেশ পরিচালনা করবে। তাই তাদের সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে বাল্য বিবাহ নির্মূল, বায়ু দূষণ রোধ এবং কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো: জোবায়দুর রহমান বলেন, শিশুদের উন্নয়নে সরকার পর্যাক্রমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিচালিত আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ কিশোর-কিশোরীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে সেখানে কিশোরীরা আসলেও কিশোরদের স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে আসতে দেখা যায় না। তিনি এসব পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সেবাদানকারী ও সেবাগ্রহণকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কাউন্সিলর অফিস তৎপর। তবে সবসময় যে কেবল অভিভাবকরাই বাল্য বিবাহের জন্য দায়ী এমন নয়। অনেক ব্যতিক্রমও দেখা যায়। তখন অভিভাবকরা মান-সম্মানের ভয়ে মেনে নিতে বাধ্য হন। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
চিলড্রেন এ্যাফেয়ার্স জার্নালিস্টস্ ফোরাম (সিএজেএন) এর সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজা জেসমিন বলেন, গণমাধ্যম জনগণের কথা বলে। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু জনগণকেও তাদের অধিকার সুরক্ষায় দায়িত্বশীল এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তিনি পরিবেশ দূষণ রোধ ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেবল আইন প্রণয়ন করেই রাষ্ট্রের কাজ শেষ হয়ে যায় না। নাগরিকদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মিজানুর রহমান পিপিএ বলেন, বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ রোধে প্রতিদিন ঢাকা শহরের যানবাহনগুলোর ওপর নজরদারি করার জন্য আটটি ডিভিশন কাজ করছে। কিন্তু প্রধান সমস্যা হলো, আমাদের দেশের মানুষ আইন মানতে চান না। তাদের কাছে আইন মানাটা অসম্মানজনক মনে হয়ে। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা আরো বেশি। দ্বিতীয় সমস্যা হলো, আমরা গাড়ি দেখে বুঝতে পারি যে গাড়িটি আনফিট। কিন্তু তার কাগজপত্র এতো নিখুঁত যে, তাকে আইনের আওতায় আনা যায়না। রয়েছে লোকবলের অভাব। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব। প্রমাণের অভাবে অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। তিনি জানান, গতবছর ঢাকা শহরে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ৩৭,০৪৫ টি মামলা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। মিজানুর রহমান ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে জরিমানা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন- কাউন্সিলর হাসিনা বারি, মিরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম রিনা, শেখ কামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ ফরিদ মিয়া, মিরপুর বাইতুল নূর জামে মসজিদের ইমাম মোঃ হাসান, মিরপুর মসজিদের ইমাম মোঃ হাসান, ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
শিশু নেতা কনক রায়ের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন শিশু নেতা নজীবুর রহমান মুহিত, মেরিনা সুলতানা, শাহরিয়ার তুহিন, মোঃ মহিন, সাবরিনা তাবাসসুম, আবিদা সুলতানা, হাছিবুল ইসলাম, নেহা আক্তার, মুরাদ ইসলাম এবং রুপা আক্তার।