শীত-কুয়াশায় কমেছে রোজগার, পঞ্চগড়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
টানা শীত-কুয়াশা ও দিনভর বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড়ের সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের কারণে কাজকর্ম কমেছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, পাথর ও চা শ্রমিক এবং দৈনিক শ্রমের উপর নির্ভরশীল মানুষদের। এ ছাড়া রোগব্যাধির সঙ্গে বাড়ছে অভাব ও অসহায় জীবনযাপনের চিত্র।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি ঢাকা পোস্টকে জানান জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
তিনি জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে গতকালও দেখা মিলেনি সূর্য। গতকাল সকাল ও বিকেলে তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল মাত্র ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ এর নিচে নেমে গেলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। সে তীব্র শীতে হাড় কাঁপছে এ অঞ্চলের মানুষদের। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে এতে জনপদের সব বয়সী মানুষজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আজও ভোর থেকেই মেঘ-কুয়াশায় ঢেকে গেছে সব। কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝরছে হিমেল শিশির। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে হচ্ছেন না শহরের মানুষজন। তবে শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
শীতের কারণে দৈনন্দিন রোজগার কমেছে পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যানচালক ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরেরাও পড়েছে শীত দুর্ভোগে। জেলার শহরের হাটবাজার ও গ্রাম এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
শীতের প্রকোপে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না চাষিরা। এর মধ্যে চরম বিপাকে পড়েছেন আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে ক্ষেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতি মাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষিরা বলছেন, সমস্যা মোকাবিলায় ২-১ দিন পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
আলী হাসান, আবুল কালামসহ কয়েকজন ভ্যানচালক জানান, প্রচণ্ড শীত-কুয়াশায় ভ্যানে উঠতে চায় না কেউ। তাই রোজগার হচ্ছে না। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে জীবন কাটছে।
আরিস, জুয়েল ও আবু তাহের নামের কয়েকজন পাথর শ্রমিক বলেন, টানা শীতে বেসামাল পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা। শীতের কারণে নদীতে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে খুব কষ্ট হয়। অন্য কোনো আয়ের পথ না থাকায় পাথর তুলেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সারাদিন পাথর তুলতে গিয়ে ঠান্ডায় জ্বর-সর্দিতে ভুগতে হচ্ছে।
নারী পাথর শ্রমিক ফিরোজা বেগম বলেন, নদীতে পাথর উঠছে কম। তাই কাজও কম। সকালে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে দেরি হলে অনেক সময় মহাজন কাজে নিতে চান না। কাজ না করলে তো পেটে ভাতও যাবে না। যত ঠান্ডাই হোক, ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো পরিবারের মুখে খাবার জুটবে না। খুব অভাবে পড়েছি। বাজারের সবকিছুই দাম। নিরামিষ খেয়েই কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছি।
এদিকে শীতের কারণে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবার শীতের শুরু নির্বাচনকালীন হওয়ায় পাঁচ উপজেলার ইউএনও এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রাপ্ত শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে আরও কম্বলের চাহিদা রয়েছে। এজন্য আরও শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে কম্বল বা শীতবস্ত্র পাওয়া গেলে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।