সন্ধ্যা থেকেই ঢাকায় একের পর এক বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া শুরু করেছে দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে ককটেল হামলা চালানো হয়েছে। এতে করে ঘরমুখো সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথক এসব ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এর একটি ঘটনার বাসে আগুন দেওয়ার সময় একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাশকতা-সহিংসতা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে। আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃতীয় দফায় বিএনপি-জামায়াত ও এলডিপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিনে সন্ধ্যার পরই ঢাকায় একের পর এক যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগানোর খেলায় মেতে উঠেছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯ টার মধ্যে মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের তাঁতিবাজার, বনানীর কাকলী, ধানমন্ডির জিগাতলায় বিজিবি সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেটের অদূরে ও গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিক বহনকারীসহ মোট ৪টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই সময়ের মধ্যে রাত ৯ টার দিকে ধানমন্ডির মিরপুর রোডে রাসেল স্কয়ারে সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেন্টারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।  খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিটি বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তৃতীয় দফার অবরোধের প্রথম দিনে আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক বহনকারী থেমে থাকা একটি বাসে প্রথম আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রঙ্গিলাবাজার এলাকায় একটি ওয়ার্কশপের সামনে থেমে থাকা শ্রমিকবাহী একটি বাসের চাকা পাংচার সারানোর কাজ করছিলেন বাসের চালক-হেলপারসহ ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা। এ সময়  হঠাৎ করে ওই বাসে পেট্রোল ছুড়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে মাওনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট ঘটনাস্থল পৌঁছে আগুন নেভায়।

বাসটির চালক রিয়াদ হোসেন জানান, শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকার বদর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিকবাহী বাস এটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বাসটির একটি চাকা পাংচার হয়। পরে অতিরিক্ত চাকা লাগিয়ে পাশে রঙ্গিলাবাজার এলাকায় একটি দোকানে পাংচার সারানোর জন্য নিয়ে যান। সেখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাসটি পার্কিং করে তিনি দোকানে চাকা নিতে যান। ওই সময় কে বা কারা বাসটির পেছনে পেট্রোল ছুড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, হঠাৎ পাশের দোকানদার তাকে ডেকে বাসটিতে আগুন লাগার খবর জানান। পরে সেখানে ছুটে গিয়ে বাসের ভেতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার পর তাৎক্ষণিকভাবে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। পরে মাওনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট ঘটনাস্থল পৌঁছে আগুন নেভায়। ততক্ষণে বাসের বেশিরভাগই পুড়ে যায়।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, বাসটিতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনার তদন্তসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে এ ঘটনার পর রাত ৭টা ৩৩ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের তাঁতীবাজারে আকাশ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটে। পরে খবর পেয়ে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আধাঘণ্টা পরই রাত ৮টা ৮ মিনিটে রাজধানীর বনানীর কাকলীতে একটি মিনিবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর রাত ৯ টার দিকে ধানমন্ডির মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ারে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেন্টারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু আলামত জব্দ করে।

এদিকে রাত ৯টা ১৭ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেটের প্রধান ফটকের বিপরীত সড়কে রমজান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আগুন দেওয়া এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করা হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিনদিন সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেয় দল দুটি। যা শেষ হয় গত ২ নভেম্বর। এরই মধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা গ্রেফতারও হন। এদের মধ্যে অনেককে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।

অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় ৫-৬ নভেম্বর এবং তৃতীয় দফায় ৮-৯ নভেম্বর সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত ও এলডিপিসহ সমমনা দলগুলো।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় অবরোধ চলাকালে ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেই চলছে।