সরকার জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভাগ্য পরিবর্তনে নজির স্থাপন করেছে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের কল্যাণে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রবীণ সদস্য শকুন্তলা ভৌমিক ৭০ বছর অপেক্ষার পর একটি স্থায়ী বাড়ি পেয়েছেন।
দেশের সমতলভূমিতে বসবাসরত ৫০টি জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ‘বিশেষ অঞ্চলের জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ব্যতীত)’ শীর্ষক বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ কর্মসূচির অধীনে দেশজুড়ে সমতল ভূমিতে বসবাসরত জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের উপহার হিসাবে মোট ৩,৫৫৪ টি বাড়ি উপহার দেওয়া হয়েছে।
এ উদ্যোগের অংশ হিসাবে, হবিগঞ্জের বাহুবলের কামাইছড়া গ্রামের বাসিন্দা শকুন্তলা ভৌমিক সম্পূর্ণ আইনি মালিকানায় দুই শতাংশ জমিতে একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দাসহ একটি দুই কক্ষের একটি আবাসন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি-ঘরে থাকতাম। আমার নিজের কোনও জমিও ছিল না। দিনমজুর হিসাবে পরিবারের চার সদস্যের সাথে আমারও কোনও জমি কেনার ক্ষমতা ছিল না।’
জীবনের শেষ প্রন্তে দাঁড়িয়ে শকুন্তলা ভৌমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার পাওয়ার পরে নিজেকে কোটিপতি হিসাবে বিবেচনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাকে অনেক সুখ দিচ্ছেন। তিনি আমাকে একটা বাড়ি দিয়েছেন। ঈশ্বর হাসিনাকে আমার জীবন দান করুন।’
জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য সরদার সরেনও ৬৫ বছর অপেক্ষা করার পরে তার স্থায়ী বাসস্থান খুঁজে পেয়েছেন।
সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসাবে, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কান্দিয়া ইউনিয়নের মোড়াবোস্তাপুকর এলাকার বাসিন্দা সরদার সরেনও সম্পূর্ণ আইনি মালিকানায় দুই শতাংশ জমিতে একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দাসহ একটি দুই কক্ষের একটি আবাসিক ব্যবস্থা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার জন্মের পর থেকেই পাড়ায় বাস করে আসছিলাম। আমি এক দিনমজুর। আমার পরিবারের ছয় সদস্যের সমস্ত ব্যয় বহন খুব কঠিন। আমার কোনও জমি কেনার সামর্থ ছিল না।’
সারেন আবেগকণ্ঠে সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন যখন দুই বিধাব মেয়ে ও এক নাতিসহ ছয়জনের পরিবার নিয়ে দুঃখে-কষ্টে একটি কুঁড়েঘওে থাকতেন, যা প্রায়ই ঝগ-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
সরেন সমতলে বসবাসরত জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্মিত তার নতুন টিনশেড কংক্রিট বাড়িটির পাশে হাঁটতে হাঁটতে তার জীর্ণ কুটিরটির কথা মনে করছিলেন।
সরদারের মতো একই রকম জীবনযাপন করেছিলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এমন মোট ৫০টি পরিবারকে রংপুর জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মোড়াবোস্তাপুকুর এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বাসস-এর সাথে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব (পিএমও) মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, এসব বাড়ির পাশাপাশি সরকার ইতোমধ্যে জাতিগত সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর স্কুলগামী শিশুদের ২,৬৭২টি বাইসাইকেল দিয়েছে, যাতে তারা সহজেই শিক্ষায় প্রবেশাধিকার পেতে পারে।
তিনি আরও জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১৫,০০০ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি হিসাবে ৪৫০.২৫ লাখ টাকা এবং ৮,৬৫০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা উপকরণ পেয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আট বিভাগের ৪৬টি জেলার ২০৭ টি উপজেলায় ৭,৩০০.১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কার্যক্রম চলছে।
তিনি আরও জানান, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠির মোট আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে ২৫,০০০ টাকা করে উচ্চ শিক্ষার জন্য এ অর্থবছরে মোট ৬.২৫ কোটি টাকা পেয়েছে।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, এরআগে সরকার সমতলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীগুলোর মাঝে মোট ১,২৭৮টি বাড়ি এবং এক হাজার সাইকেল বিতরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, সমতলের জাতিগত সংখ্যালঘুদের ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা- রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীগুলিকে একই সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন অভিন্ন বাড়ি দেওয়া হয়েছে।