সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মো: সাইফুল ইসলাম :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর-১০ মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তান্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মত আমার আর কোন ভাষা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আবেগাপ্লুত কন্ঠে এ কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি দেশবাসীর প্রতি যারা ১৭ জুলাই থেকে একাধিক দিন ধরে তান্ডব চালিয়েছে এবং তাঁর সরকারের জনজীবনকে সহজ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে গত ১৫ বছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনায় কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেল করবার সময়ও অনেক বাধা-বিঘœ আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধা বিঘœ অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ। এই স্টেশন যেভাবে ধ্বংস হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল, ইলেকট্রনিক সিস্টেম ও সম্পূর্ণ মডার্ন। এটা যে কতদিনে ঠিক হবে আমি জানি না, কষ্ট পাবে সাধারণ মানুষ।
সরকার প্রধান বলেন, এটা তাঁর সরকার করে দিয়েছে সকলে যাতে সময়মত স্কুল কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে পারেন এবং কর্মস্থল থেকে আবার ঘরে ফিরে অন্তত কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেন। এতে আর্থিক দিকটাও সাশ্রয় হয়। সেসব কথা চিন্তা করেই তাঁর সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম নির্মাণ করে দিয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মত পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে, বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলবো যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি সেই দুর্ভোগ আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
এরআগে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি পুরো স্টেশন ঘুরে দেখেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত শুক্রবার মেট্রোরেল স্টেশনে তান্ডবলীলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্যান্য স্থাপনার মতই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আধুনিক গণপরিবহনের এই মেট্রো স্টেশন।
ভাংচুর করা হয় সিসি ক্যামেরা, এলইডি মনিটর ও টিকেট কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জায়গা। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিষ।
শেখ হাসিনা বলেন, যে সব স্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে সেগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়েছে। যারা উন্নয়নবিরোধী এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়িত তাদের মানসিকতা কোন ধরনের সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজ বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা আজ বিদেশে যাচ্ছে, তারা সেই সম্মান পাচ্ছেন। আগে সেটা পেতেন না। ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে আমাদেরকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছিল। আজ সেটা নেই। কিন্তু আমি জানি না এই যে প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করেছি যেগুলো মানুষকে সেবা দেয়, তাদের জীবনযাত্রা সহজ করেছে, মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে ঠিক সেইগুলো ভেঙ্গে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া কোন ধরনের মানসিকতা!
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘেœ মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রোরেলের ওপর কেন এতো আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর স্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহুদেশের তুলনায় একটি আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর মেট্রোরেল আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এটা বিশ^াস করা যায় না যে, এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু, সেই কাজই তারা করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করলো আমি সাথে সাথে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার কিরুদ্ধে সরকার আপিল করলো। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সকলের বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোলনকারি থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ^াস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যে কোন নগারিককেই আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এর সুযোগ নিয়ে ১৭ জুলাই থেকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
তিনি বলেন, ’৭৫-এর পর ২৯ বছর এদেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
তিনি প্রশ্ন করেন এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়বো? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এতো ক্ষোভ কেন? আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। আদালতের রায় নিয়েও আমরা বারবার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকান্ড হলো, আর কীভাবে করলো?
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই।
আবেগপ্রবণ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রুত সময়ে হয়।
তিনি এটাকে আরো বাড়িয়ে একেবারে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত করে দিয়েছেন। যাতে মানুষ আরো সুন্দরভাবে চলতে পারে। যারা এর ওপর আঘাত করলো এই মেট্রোরেল এভাবে ভাংচুর করলো, যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রতিদিন চলাচল করতে পারতো অল্প সময়ের মধ্যে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। এই আনন্দ যারা নষ্ট করলো, জনগণের নির্বিঘেœ চলাচলের পথ যারা রুদ্ধ করলো তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি সেই বিচারের দিকে চেয়ে আছি। আমি এর নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছি না।