মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জে সোয়া ৪ কোটি টাকার সেতুর পাশে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। ভোগান্তির এই সেতুটি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমসুরা গ্রামের মেঘনা নদীর শাখা খালের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি দক্ষিণ চরমসুরা ও ঝাপটা গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। সড়ক না থাকায় চলাচলের জন্য সেতুর একপাশে একটি, অপরপাশে দুটি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুর ওপরে উঠতে ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করতে হচ্ছে দুটি গ্রামের কয়েক হাজার গ্রামবাসীর। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সদর উপজেলা (এলজিইডির) কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২১ সালের অক্টোবরে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫ টাকা ব্যয়ে ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের এ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় টিএন-এএসআই যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংযোগ সড়কসহ সেতুটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। পরে নকশা জটিলতার কারণ দেখিয়ে জুন পর্যন্ত সময় তারা বাড়ায়। সে সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আবারও ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেয় ঠিকাদার। তবে এখনো সেতুর সংযোগ সড়ক ও রেলিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে সেতুর সুফলের পরিবর্তে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে যাতায়াতকারীদের।
জানা গেছে, সদর উপজেলার চর কেওয়ার ইউনিয়ের দক্ষিণ চরমসুরা-রমজানবেগ সড়কের পূর্বপাশ লাগোয়া এ সেতুটির মেঘনার খালের পূর্ব পাশের ঝাপটা ও দক্ষিণ চরমসুরা গ্রামের একটি অংশকে এ সেতুটি মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সেতুটি মূল সড়ক থেকে অন্তত ১০ -১২ ফুট উঁচুতে। সেতুর পূর্বপাশের উচ্চতা কাচা মাটির সড়ক থেকে অন্তত ১৮-২০ ফুট ওপরে। দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দিয়ে উঠানামা করতে বাশ-কাঠ দিয়ে তিনটি খাড়া সাঁকো বানানো হয়েছে। সাঁকো বেয়ে সেতুর উপরে উঠে সড়কপথে যাতায়াত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭-৮ বছর আগেও ঝাপটা এলাকার মানুষ মেঘনার খালটি নৌকায় করে পারাপার হতে হতো। এরপর এখানে বাঁশের সাঁকো বানানো হয়। ঝাপটা ও দক্ষিণ চরমসুরা গ্রামের চার হাজার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিন সাঁকো পার হয়ে মুন্সীগঞ্জ শহরে যাতায়াত করত। সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ায় খুশি হয় স্থানীয়রা। তবে সেতুতে ওঠার জন্য সংযোগ সড়ক না করায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতু পারাপার হতে হয়। ফলে বাঁশের সাঁকোতে উঠতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে কয়েকজন হাত ভেঙেছে। দুধ, ডিম ও কৃষিপণ্য নিয়ে সাঁকো থেকে পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকে।
ঝাপটা গ্রামের হাজী বাচ্চু (৬৫) বলেন, প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। এ সেতু পার হওয়ার সময় ভয়ে পুরুষদের ঘাম ছুটে যায়। নারী ও শিশুদের ভোগান্তি বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরকার কোটি টাকা খরচ করে সেতু বানালো। ঠিকাদাররা সংযোগ সড়ক না করায় সেতুটি আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিল।
অন্নি আক্তার বলেন, সেতু বানোর আগে যখন সাঁকো দিয়ে খাল পার হতাম তখনও এমন ভোগান্তি ছিল না। সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতু বানিয়ে আমাদের মত নারী ও ছোট শিশুদের আরও বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে। খাড়া সাকোঁ বেয়ে সেতুতে উঠতে পারি না, খাল দিয়ে নেমে যেতেও পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। বৃষ্টি হলে সেটিও পারব না।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. রফি উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. শফিকুল আহসান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে সেতুর কাজ আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারছে না। আমরা তাদেরকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ তারা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। এরপরেও সেতুটি বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।