সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ বাজার ছোট হচ্ছে
বড় হচ্ছে আমদানির ক্ষেত্র
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। যার ৫০ শতাংশ সাবমেরিন ক্যাবল থেকে যাচ্ছে, অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ যাচ্ছে আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) মাধ্যমে। অথচ এক বছর আগে (গত বছর এই সময়ে) দেশে মোট ব্যবহার হওয়া ব্যান্ডউইথের প্রায় ৬০ শতাংশ যেতো সাবমেরিন ক্যাবল থেকে।
দেশীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের (সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি) ব্যান্ডউইথের চেয়ে বেসরকারি পর্যায়ের (আমদানি করা) ব্যান্ডউইথের বাজার বড় হওয়াকে আশঙ্কাজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশে যে দুটো সাবমেরিন ক্যাবল আছে, তার মধ্যে একটির সক্ষমতা আগামীতে বাড়বে। সরকারি তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলও আসছে বাংলাদেশে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে আরও ৩টি সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। সবগুলো ২০২৫ সালের মধ্যে অপারেশনে আসছে। ফলে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বিএসসিসিএল (বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) এর অধীন দুটি সাববেমির ক্যাবল দিয়ে দেশে ব্যান্ডউইথ আসছে (টোটাল ক্যাপাসিটি) ৩৪০০ জিবিপিএস। এরমধ্যে সি-মি-উই-৪ দিয়ে দেশে আসছে ৮০০ জিবিপিএস এবং সি-মি-উই-৫ দিয়ে দেশে ব্যান্ডউইথ আসছে ২৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। আর সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম অংশে ১০০ জিবিপিএস রাখা আছে। দেশের ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৩৪০০ জিপিবিএস হওয়া সত্ত্বেও তা থেকে ব্যবহার হচ্ছে ২৫০০ জিবিপিএসের মতো। প্রায় ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকলেও দেশের আইআইজি ও আইএসপি (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) ৬টি আইটিসি থেকে প্রায় ২৫০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে। দিন দিন এই পরিমাণ বাড়ছে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমি আইটিসির পক্ষেই ছিলাম না। আইটিসির ব্যান্ডউইথ মানে তো আমরা তা আমদানি করছি। যেহেতু আমার ব্যান্ডউইথের ব্যাপআপ আছে, ফলে আইটিসি দরকার নেই। কিন্তু লাইসেন্স তো দেওয়া হয়েছে। সেগুলো তো আর বাতিল করা যাবে না। ফলে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথে নজর রাখছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যেটা বুঝতে পেরেছি— তা হলো প্রতিযোগিতা করে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিকে টিকে থাকতে হবে।’
মন্ত্রী জানান, গুগল, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পশ্চিমবঙ্গে (কলকাতাভিত্তিক) ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে। আইটিসিগুলোর ব্যান্ডউইথ আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার এটা বড় কারণ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
প্রসঙ্গত, দেশে সরকারি আইটিসি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড) ছাড়াও বেসরকারি ৬ আইটিসি প্রতিষ্ঠান হলো— ফাইবার অ্যাট হোম, সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, বিডিলিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান ভারতের টাটা ও ভারতী এয়ারটেল থেকে বেশিরভাগ ব্যান্ডউইথ আমদানি করে থাকে। খাত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন কোম্পানি হিসেবে এসেছে লাইটস্টর্ম নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। শিগগিরই জিও এবং রিলায়েন্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ আইটিসির মাধ্যমে দেশে আসবে।
জানা গেছে, গুগল ও ফেসবুক ভারতে ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে ক্যাশ বা পিএনআই ব্যান্ডউইথ আসছে। দাম কম হওয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো (আইআইজি- ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এই ব্যান্ডউইথের প্রতি ঝুঁকছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৬-এর মাধ্যমে ১৩ দশমিক ২ টিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেশে আসবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৫-এ অতিরিক্ত ৩৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ যুক্ত হবে। এছাড়া সি-মি-উই-৬-এ ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ফলে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ঝুঁকির মুখে পড়বে। জানা গেছে, আইটিসি সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যাকআপ হিসেবে আনা হয়। কথা ছিল সি-মি-উই-৫ ক্যাবলে বাংলাদেশ যুক্ত হলে আইটিসিগুলো উঠিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি। আর দেশে আইটিসিগুলো সেবা দিতে শুরু করে ২০১২ সাল থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-হাব লিমিটেডের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক বলেন, ‘আইটিসির ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বাড়ার কারণ দাম কম। সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যান্ডউইথের চেয়ে দাম কম হওয়ায় আইআইজিগুলো আইটিসির ব্যান্ডউইথের দিকে ঝুঁকছে। ক্যাশ বা পিএনআই ব্যান্ডউইথ কলকাতা থেকেই পাচ্ছে।’ সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন