সারাদেশে আবারও চিকিৎসকদের ধর্মঘটের ডাক

প্রকাশিত: ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২৫


সাজ্জাদ হসেন:

 

চিকিৎসক ও মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দাবি আদায়ে বুধবার (১২ মার্চ) সারা দেশে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তবিভাগ ও বৈকালিক চেম্বার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু থাকবে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এক দিনের কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ঢাকা ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন। এর আগে কর্মবিরতির ডাক দেন সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করা হয়।

লিখিত বক্তব্য নাদিম হোসাইন বলেন, বুধবার সারা দেশের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা এবং বৈকালিক চেম্বার বন্ধ থাকবে। মানবিক বিবেচনায় আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি, লেবার রুমের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

নাদিম হোসাইন বলেন, আগামীকাল (বুধবার) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হলো। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমবেত হবেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।

এদিকে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে পাস করা ম্যাটসদের অনেকগুলো দাবির একটা হচ্ছে নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেওয়া। বিষয়টি নিয়ে আদালতে এটি রিট আবেদন করা হয়েছে। ১২ মার্চ ওই রিটের শুনানি হবে।

এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না— এমন দাবি তুলে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে এ ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর অধীনে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন আর ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন।

বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন মেডিক্যাল অ্যাসিন্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পাল্টায় কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসক, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরাও। তাদের পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি—

১। এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আবেদন আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনও পদবির প্রচলণ করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই।

২। রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না— এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৩। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্র্নিধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

৪। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।

৫। অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।