সেলিনা আক্তারঃ
ঈদে সালামি দেওয়ার রীতি মোটামুটি পুরনোই। তবে এই রীতিটাকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই পালন করে থাকে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা। নতুন চকচকে টাকায় ঈদের সালামি পাওয়াটাই তাদের কাছে আনন্দের। তাই প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে নতুন টাকার দোকানগুলো। এবারও নতুন টাকা সংগ্রহকারীরা ভিড় জমাচ্ছেন নতুন টাকা কেনাবেচার দোকানগুলোতে। চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন নতুন টাকার নোট।
নতুন টাকা কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, ঈদের দিন নতুন টাকা সালামি পেলে ছোটরা আনন্দিত হয়। একইসঙ্গে যারা সালামি দিচ্ছেন তারাও এটা উপভোগ করেন। সে কারণেই নতুন টাকা কিনতে এসেছেন।রবিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলিস্তানের নতুন-পুরাতন টাকা বেচাকেনার দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কোথায় গেলে কিছুটা কম দামে কিনতে পারবেন নতুন টাকা। বিক্রেতারাও যুক্ত আছেন ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০ টাকার নতুন এক বান্ডিল ৪০০ টাকা বেশি দামে, ১০০ টাকার বান্ডিল ৩৫০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিল ৩৫০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিল ২৫০- ৩০০ টাকা, ১০ টাকার বান্ডিল ২৮০-৩০০ টাকা, ৫ টাকার বান্ডিল ১৫০ টাকা এবং ২ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন দোকানে এই দর-দামে ১০ থেকে ৫০ টাকা তারতম্য রয়েছে।
নতুন নোটের এক বিক্রেতা মো. মাসুম বলেন, ‘এবার সব সময়ের মতো ১০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। আর এই নোটেরই দাম তুলনামূলক বেশি।’নতুন টাকা কিনতে আসা তৌহিদ বলেন, ‘ঈদে সালামি নেওয়া আর দেওয়া দুটির মধ্যেই আনন্দ আছে। ছোটদের সালামি দিতে তাই নতুন টাকা কিনতে এসেছি। ২০ আর ৫০ টাকার নোটের দুইটা বান্ডিল নিয়েছি।’
মনিরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি ব্যাংক থেকে নতুন নোট নিয়েছি। কিন্তু আরও দরকার। ব্যাংক তো আসলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ নোট দেয়। তাই আমার অতিরিক্ত টাকাগুলো এখান থেকে কিনে নিচ্ছি।’ ব্যাংকে নতুন টাকা নেই অভিযোগ করে আবুল কায়েস নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি এক ব্যাংকে গিয়েছিলাম নতুন টাকা আনতে। তারা আমাকে বলল নতুন টাকা নেই, এখন আর দেওয়া যাবে না। ১ (এপ্রিল) তারিখের আগে নাকি তারা নতুন টাকা বিতরণ করে দিয়েছে। তাই এখান থেকেই কিনতে এলাম।’
বিক্রেতারা দাম বেশি রাখে অভিযোগ করে সাগর নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘দশ টাকার একটা বান্ডিল কারও কাছে ২৮০ টাকা আবার কারও কাছে ৩০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে হাঁকানো হচ্ছে। টাকা তো একই তাহলে একেক দোকানে একেক রকম দাম কেন? কেউ একটু না ঘুরে কিনলেই ঠকবে।’
দামের ভিন্নতা নিয়ে লিমন নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা আসলে সবাই একই সময়ে টাকা কিনিনি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসে টাকার দামও বেড়ে যায়। যার যে দামে কেনা পড়ে সে সেভাবেই বিক্রি করে। তাই দাম আলাদা হয়। লোকসান দিয়ে তো আর কেউ বিক্রি করবে না।’এসব অস্থায়ী দোকানে বেশিরভাগ মানুষ নতুন টাকা কিনতে এলেও কেউ কেউ বদলে নিচ্ছেন ছেঁড়া টাকাও।
এমদাদ নামের এমনই এক ক্রেতা এসেছেন নতুন টাকা কিনতে ও ছেঁড়া টাকা বদলাতে।তিনি বলেন, ‘আমি ৫০ টাকা ও ২০ টাকার দুটি বান্ডিল কিনেছি। আর আমার কাছে ৫০০ ও ১০০ টাকার দুটি ছেঁড়া নোট ছিল সেগুলো বদলে নিয়েছি।’ ছেঁড়া টাকার বিপরীতে কত টাকা পাওয়া গিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দুটি নোটের ক্ষেত্রেই ২০ শতাংশ করে কম দাম পেয়েছি। মানে ৫০০ টাকায় ৪০০ টাকা ও ১০০ টাকায় ৮০ টাকা পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাও ভালো যে টাকাটা কাজে লাগাতে পেরেছি। এগুলো তো চালাতেই পারতাম না।’
ছেঁড়া টাকার ক্রেতা ও নতুন টাকা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাধারণত ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে ছেঁড়া টাকা কিনি। এটা নির্ভর করে টাকাটা কী পরিমাণ ছেঁড়া তার ওপর।’ ঈদের সময় নতুন টাকা বিক্রেতাদের ব্যবসা চাঙা থাকলেও ঈদ ছাড়া কেমন যায় জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, ঈদ ছাড়া তাদের ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
আলমগীর নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘এই রোজার মাসে আমার আয় হবে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঈদ চলে গেলেই সেটা ২০-২৫ হাজারে নেমে আসবে।’আরেক বিক্রেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ঈদেই আমরা নতুন টাকাটা বেশি বিক্রি করি। অন্য সময়ে এই বিক্রি খুব একটা থাকে না বললেই চলে।’