সিইসিসহ পাঁচ কমিশনার ছাড়তে পারেন পদ

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন। সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের ‘সৌজন্য বিনিময়ের’ জন্য ডেকেছেন। আজকের এ অনুষ্ঠান থেকেই পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন বলে ইসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিলেও মাঝপথেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে যাচ্ছেন।
গতকাল নিজ দপ্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের অনুষ্ঠানে তিনি সব প্রশ্নের জবাব দেবেন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এর আগে কমিশনের সদস্যদের নিয়ে নিজ দপ্তরে দীর্ঘ বৈঠক করেন সিইসি। এতে কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, সাবেক সচিব মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে আরেক সদস্য সাবেক সচিব আনিছুর রহমান গতকাল কমিশনেই যাননি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছাড়েন। পরে সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এরপর থেকেই বিদায়ের মানসিক প্রস্তুতি নেন বর্তমান কমিশনের সদস্যরা।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব নথিতে সইয়ের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। ১১টায় সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদায়ী বৈঠকের কর্মসূচি রয়েছে। এরপর ১২টায় সাংবাদিকদের সামনে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশন সদস্যদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরেই রাষ্ট্রপতিসহ অন্তর্র্বতী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেন ইসি সদস্যরা। নিজেদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সরকারের তরফে বার্তা জানার চেষ্টা চালালেও তাতে সফল হননি। পদত্যাগের বিষয় কমিশনের সদস্যরা একমত হলেও সময় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সরকারের কোনো বার্তা না পেয়ে নিজ থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে কমিশনারদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। কমিশনের অন্তত দুই সদস্য এভাবে পদত্যাগের ফলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করে সরকারের রোষানলে পড়ার শঙ্কার কথাও বলেন। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে তারা একাধিক বৈঠক করেন।

ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকার ব্যাপারে বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন একাধিক কমিশনার। তাদের যুক্তি ছিল, বিদ্যমান সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভোট গ্রহণের আগে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে তপশিল ঘোষণার রেওয়াজ আছে। ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। ওই হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর নতুন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা। তখন তপশিল ঘোষণা করতে না পারলে তারা পদত্যাগ করবেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, দ্রুতই পদত্যাগের জন্য অন্য চার কমিশনারের চেয়ে বেশি উদগ্রীব ছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে তিনি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ‘বিপ্লব ও ফরমান : সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে সমকালে কলাম লেখেন। ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে জানানো সমীচীন মনে করছেন। সেখানে তিনি সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথাও তুলে ধরেন। এমনকি সংবিধান অমান্যের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি সংবিধান স্থগিত বা বাতিলের প্রসঙ্গও তোলেন।

ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুরুতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগের বিষয়েও আপত্তি তুলেছিলেন কমিশনের সদস্যরা। তারা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সাংবাদিকদের সামনে আসতে আপত্তি তোলেন। তবে সিইসি এ ক্ষেত্রে ছিলেন নাছোড়। তিনি চুপিসারে পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার বিষয়ে কোনোভাবেই রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত আজকের সংবাদ সম্মেলনের নাম দেওয়া হয় সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘সৌজন্য বিনিময়’।

এদিকে সরকার বদলের পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। গতকাল বুধবারও বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন দুদকের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

এর আগে আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারকই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ থেকে বাদ যাননি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও। পুলিশ, প্রশাসনসহ সবখানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ

সিইসিসহ কমিশন সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ করেছে ‘নাগরিক সমাজ’ নামের একটি সংগঠন। বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। বিক্ষোভে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের পাশাপাশি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নূরুল হুদা ও কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের বিচারের দাবি জানানো হয়।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও গত আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক পদে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন, উপনির্বাচনের আয়োজন করে। ইসি গঠনে দীর্ঘদিন আইন ছিল না। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে ২০২২ সালে নতুন কমিশন গঠনের আগে আকস্মিক আইন প্রণয়ন হয়, আর সেই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচজন।