নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত ও ৬৫১ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ২৬ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত, চারজন আহত এবং ০৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সবমিলে ৪৬৭টি দুর্ঘটনায় ৪৯৬ জন নিহত এবং ৬৮১ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে ১৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭২ জন নিহত, ১০৭ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, নিহতের ৪২ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও আহতের ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৮ জন নিহত ও ১১২ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে সিলেট বিভাগে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১০৬ জন আহত হয়েছেন।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন পথচারি, ৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ৭৪ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ২ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক , ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনী সদস্য, ১ জন নৌ বাহিনী সদস্য, ২ জন চিকিৎসক, ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন সাংবাদিক, ১০৭ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৫৮ জন পথচারি, ৪৩ জন নারী, ৩৪ জন শিশু, ২৮ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৫৩৪টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৬২ দশমিক ১৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ৪৩ চাকায় ওড়না পেছিয়ে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৭ দশমিক ৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ: সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ বের করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি। মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার। চলতি বর্ষায় সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি। যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা। উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি। অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশ: মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস। রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা। সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা।
রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা। চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মাঝে সৃষ্ট ছোট বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা। গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।