স্ত্রী তালাক দিলে কি দেনমোহর পাবে?

প্রকাশিত: ৫:২৯ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৪

ইসলামিক ডেস্ক:

নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক। বৈধ ভালোবাসায় এদের সিক্ত হওয়ার একমাত্র হালাল মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে, যার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে দেনমোহর। এটি স্ত্রীর অধিকার। স্বামীর তা পরিশোধ করা ইসলামের বিধান। এটি কেবল একটা অঙ্ক ধরে রাখার নাম নয়; বরং তা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব।

ইসলামি শরিয়তে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। তবে স্ত্রী যেকোন সময়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাবার অধিকার রাখে। এটাকে শরিয়তে ‘খোলা’ বলা হয়। এ সময় স্ত্রী তার মোহরানা স্বামীকে ফেরত দেবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ছাবেত ইবনু কায়েসের স্ত্রী নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল এবং বলল, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি ছাবেত ইবনে কায়েসের দীনদারি এবং চালচলনের নিন্দা করি না, তবে আমি মুসলিম নারী হয়ে (তার অসুন্দর হওয়ার কারণে) তার আনুগত্যহীন হবো — এটা চাই না।’ তখন নবীজি বললেন, ‘তুমি কি তার মোহর বাবত বাগান ফেরত দেবে?’ নারী বলল, ‘হ্যাঁ দেব।’ নবীজি ছাবেতকে বললেন, ‘বাগান গ্রহণ কর এবং তাকে ‘খোলা’ হিসেবে এক তালাক প্রদান কর।’ (বুখারি, মিশকাত: ৩২৭৪)
এ হাদিস থেকে জানা যায়, স্ত্রী স্বামীকে সরাসরি তালাক দিতে পারে না, তবে তালাক নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এ অবস্থায় স্বামীকে মোহরানা ফেরত দিতে হবে। আর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর পূরণ করে দিতে হবে।

পবিত্র কোরআনে দেনমোহরের আলোচনা
মানুষের সব চাহিদার সুষ্ঠু সমাধান আছে ইসলামে। মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষের চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কলুষ রাখতে বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً
অর্থ: তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে, তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজন। (সুরা নিসা, আয়াত: ৩)

দেনমোহর সম্পূর্ণ নারীর অধিকার। এ অধিকার খর্ব করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡهُنَّ اُجُوۡرَهُنَّ مُحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ وَ لَا مُتَّخِذِیۡۤ اَخۡدَانٍ
অর্থ: আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে সচ্চরিত্রা নারীদের তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। যদি তোমরা তাদের দেনমোহর দাও বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। (সুরা মায়েদা. আয়াত : ৫)
দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি
স্বামীর জন্য দেনমোহর বিয়ের মঞ্চে ও বাসরের আগে পরিশোধ করা আবশ্যক। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের মঞ্চে জিজ্ঞেস করতেন, দেনমোহর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা। হযরত ফাতেমা (রা.) হযরত আলী (রা.)-এর কাছ থেকে বাসরের আগেই দেনমোহর আদায় করেন।
বিয়ের পর স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর দেনমোহর আদায়কে আবশ্যক করা হয়েছে। পুরুষের জন্য নারীর এ প্রাপ্য অধিকার আদায়ে গড়িমসির কোনও সুযোগ নেই। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনও নারীকে বিয়ে করলো এবং তার দেনমোহর বাকি রাখলো, এরপর সে ইচ্ছা করলো দেনমোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না, তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (কানজুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)

দেনমোহর নগদে পরিশোধ করা সুন্নাত; তবে অপারগ হলে কিছু বাকি রেখেও বিয়ে করা জায়েজ। তবে এটি কিছুটা পরিশোধ করে বাকিটা মৃত্যু পর্যন্ত দেরি করার যে রীতি সমাজে প্রচলিত আছে, এর কোনও ভিত্তি নেই। এ প্রচলন অবশ্যই বাদ দিতে হবে। আর স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করার পূর্বেই যদি স্ত্রী মারা যায়, তাহলে স্বামীকে স্ত্রীর ওয়ারিশদের তা পরিশোধ করতে হবে। (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১০/১১৫)
প্রকৃতপক্ষে, দেনমোহরও এক প্রকার ঋণ। কেউ যদি তা আদায়ের ইচ্ছা না রাখে, তাহলে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সে ব্যক্তিও প্রতারক বা চোর হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের উচিত এমন মারাত্মক অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা, আর এজন্য দেনমোহর আদায় করে দেয়া। সাধ্যের অতিরিক্ত দেনমোহর নির্ধারণ করে আদায় না করা গুনাহের কাজ। আর সাধ্যের মধ্যে অল্প দেনমোহর নির্ধারণ করে তা আদায় করে দেয়াই ইসলামের বিধান।