স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারীতে হাসপাতাল, আতঙ্কে ক্লিনিকের মালিকরা

প্রকাশিত: ১০:০২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অবাধে গড়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নেই অনুমোদন। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো টার্গেট করে আশপাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং না থাকায় বিধি উপেক্ষা করে রাজধানীর অলিগলি ছাপিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও শয্যাসহ সার্জারির সরঞ্জামাদি। অতিমুনাফালোভেীরা অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান খুলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নামে চালিয়ে যাচ্ছে গলাকাটা বাণিজ্য। মূলত বৈধের চেয়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে পাঁচ বছরের শিশু আয়ান আহমেদের করুন মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তোলপার সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অবৈধ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। এমন হুঁশিয়ারিতে দেশের অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। একই সঙ্গে তারা অভিযানিক দলের কার্যক্রমের খোঁজ-খবর নিয়ে ম্যানেজের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ইতোমধ্যেই সিভিল সার্জনদের কাছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা চেয়ে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধে ও প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষ অভিযানে নামবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ঘিরেই তার আশপাশের এলাকায় পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং না থাকায় দিনের পর দিন ব্যাঙের ছাতার মতো রাজধানী ঢাকার অলিগলি ছাপিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা পেশায় না থাকলেও অনেকেই অতিমুনাফার আশায় শেয়ার হোল্ডার নিয়ে দেদারছে গলাকাটা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানা লাগোয়া একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য জানতে গিয়ে থানা পুলিশ ও ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিক। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত করে জানতে পারে ওই প্রতিষ্ঠাটির কোনো অনুমোদন ছিল না। ওই ঘটনায় মালিকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও চালু করা হয়েছে। রাজধানীর ঢামেক, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী, পঙ্গু হাসপাতাল মিরপুর ডেন্টাল হাসপাতাল ঘিরে কয়েকশ অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বøাড ব্যাংক গড়ে উঠেছে। দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের আশপাশে এক ডজনের বেশি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক চিকিৎসাসেবার নামে গলাকাটা বাণিজ্য করে আসছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতি মাসে নির্ধারিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া নিউজ পোস্টকে বলেন, সারা দেশে বৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৫ হাজার। তবে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, বøাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের যে নীতিমালা রয়েছে, তা সবারই মেনে চলা উচিত। তিনি বলেন, সুন্নতে খতনা করাতে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশের কোথাও লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক চালানো যাবে না, বন্ধ করতে হবে। না হলে কঠিন পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়। এ সময় আয়ানের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম কার্যক্রম সমর্থনযোগ্য নয়। আয়ানের চিকিৎসায় যদি কোনো অবহেলা থাকে তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগে এই অনুষ্ঠানেই আয়ান হত্যার সুষ্ঠু বিচারসহ চার দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ ও তার পরিবার। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারিতে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় অজানা আতঙ্কে রয়েছেন মালিকরা। একই সঙ্গে তারা অভিযানিক দলের কার্যক্রম ও গতিবিধি অনুসরণ করে ম্যানেজ করার জন্য গ্রæপিং লবিংও শুরু করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিউজ পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর গত সোমবারই অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উপজেলা পর্যন্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সারা দেশে অভিযান চালানো হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা হবে দ্বিগুণ-তিনগুণ। দিনদিন এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এসব অবৈধ ক্লিনিকে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন, আবার মৃত্যুর মুখেও পতিত হচ্ছেন। জেনেশুনে ভুল চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হত্যাকাÐের শামিল। এতে চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

সুন্নতে খৎনায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা
# মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউই
# পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণে হাইকোর্টের রুল
# চেতনানাশক প্রয়োগে সতর্ক থাকা জরুরি: চিকিৎসক
# ইউনাইটেড হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

সাইফুল ইসলাম
পাঁচ বছরের অবুঝ শিশু আয়ান আহমেদ। তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুন্দর এই পৃথিবীর বুক থেকে পরিবারের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে অকালেই বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। পরিবারের সিদ্ধান্তে নামি-দামি হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে সুস্থ হয়ে আর বাসায় ফিরতে পারেনি সে। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে বেডে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েই চির বিদায় নিতে হয়েছে শিশু আয়ানকে। লাইফ সাপোর্টে রেখেও তাকে আর বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। পরিবারের অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ আর চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই শিশু আয়ানের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভুক্তভোগীর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোট। ইতোমধ্যেই আয়ানের মৃত্যুর প্রতিবাদে পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন শিশুটির স্বজন-পরিবার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা বুঝে চেতনানাশক ওধুষ প্রয়োগ করা দরকার ছিল। এক্ষেত্রে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকা জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ওই হাসপাতালটির নিবন্ধন ছিল না। তাই গত ১০ জানুয়ারি ওই হাসপাতাল পরিদর্শন ও অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে গত রোববার পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসহ সব কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মইনুল আহসান। অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তে চিকিৎসাধীন সব রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, ঘটনার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বরুনা নিবাসী শামীম আহমেদ দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আয়ান আহমেদ ছিল বড়। মেয়ের নাম আসফিয়া জান্নাত হুমায়রা। পাঁচ বছরের ছেলে আয়ানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে রূপগঞ্জের জলসিঁড়ি এলাকায় জলসিঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করেন তার বাবা শামীম আহমেদ। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নার্সারীর মেধাবী ছাত্র ছিল সে। তাকে ঘিরে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। পরিবারের সিদ্ধান্তে ছোটবেলায়ই সুন্নতে খৎনা করার সিদ্ধান্ত নেন তার মা-বাবা। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে আয়ানকে বাড্ডার সাতারকূল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। ডাক্তারের পরামর্শে পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনা করাতে আয়ানকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরিবারের সিদ্ধান্ত ছাড়াই চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে আয়ানের সুন্নতে খৎনা করেন। পরদিন ১ জানুয়ারি সেখানে অবনতি ঘটলে জ্ঞান ফিরে না আসায় সন্ধ্যার পর গুলশান-২ এ ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই হাসপাতালের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু শিশুটির শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলেও খোঁজ-খবর নিতে পারেননি পরিবারের কেউই। অবশেষে গত ৭ জানুয়ারি ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে ৬ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে পরিশোধ করতে বলেন।
শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ নিউজ পোস্টকে বলেন, সুন্নতে খৎনা করাতে মাত্র ১০ থেকে সর্বোচ্চ আধঘন্টা সময় লাগার কথা। অথচ চিকিৎসকরা আমাদের অনুমতি ছাড়াই চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে আয়ানের পুরো দেহ অচেতন করেন। এরপর ইন্টার্নি চিকিৎসকদের দিয়ে ক্লাস করানো হয়। ততক্ষণে আমার একমাত্র ছেলে আয়ান সুচিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের অবহেলায় আমার ছেলের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা ( মামলা নং-১৩, ০৯/০১/২৪) করেছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আব্দুর রউফ সবুজ ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেফতার তো দুরের কথা আটকও করা হয়নি। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন করেছেন। উচ্চ আদালতে কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটও করা হয়েছে। জনম্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেছেন এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। সেই রিটের শুনানিতে গতকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। কিন্তু ওই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা ছাড়া জড়িতদের কাউকে আটক বা গ্রেপ্তরের এখনো দৃশ্যমাণ কোনো কিছু জানতে পারিনি। শামীম আহমেদ বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেক প্রভাবশালী। এর আগে অনেকেই মারা গেছেন এই হাসপাতালে, কিন্তু কোনো বিচারের মুখোমুখি হওয়ার খবর শুনিনি। মামলার পর থেকে আয়ানের মৃত্যুর সুষ্ঠ বিচার নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আদৌ এর বিচার পাবো কিনা জানিনা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জানাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অ্যানেসথিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম শফিকুল আলম নিউজ পোস্টকে জানান, দুই শতাংশের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে শিশুর অবস্থা বিবেচনায় ডাক্তার কতটুকু চেতনাশক ওষুধ প্রয়োগ করবেন, সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরি। তিনি বলেন, তিন থেকে সাত বছরের বাচ্চাদের এই অপারেশনটা করা হয় বা অ্যানেস্থেসিয়া দেয়া হয়। এজন্য এটা খুব সেনসেটিভ। সার্জনের জন্য খুব সুবিধা হয়, যদি তাকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে অপারেশন করা হয়। অন্য কোনো অর্গানের যদি যেমন-ব্রেইনে, হার্টে, লিভারে এই ধরনের কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে এদের রিভার্স হতে একটু দেরি হয়। আবার যদি অপারেশনের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়। অক্সিজেন সাপ্লাই কিংবা ওষুধের সাইড ইফেক্টের জন্য তখন জ্ঞান ফিরতে আরও দেরি হতে পারে।
দেশের প্রখ্যাত শিশু সার্জন অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল নিউজ পোস্টকে বলেন, শিশুর শারীরিক-মানসিক দিক বিবেচনা করে পৃথিবীর সর্বত্রই লোকাল কিংবা জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে খৎনা করা হয়। তিনি বলেন, প্রায় সময়ই বাবা-মা বলে আমি তো আমার বাচ্চার বেহুঁশ করে করাবো না, সেটা ওনারা বলতেই পারেন। কারণ, অ্যানেস্থেসিয়ার ঝুঁকি তো কিছু রয়েছেই। কিন্তু একটা দিক চিন্তা করতে হবে জোর করে যদি আমরা একটা বাচ্চার খতনা করতে যাই, তাহলে তার (বাচ্চা) কিন্তু সার্জিক্যাল ট্রমা হয়। পরবর্তীতে মানসিক সমস্যাও হতে পারে। সে ভীত হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমার মনে হয়, একজন অভিজ্ঞ শিশু সার্জনের হাতে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি যেভাবে মনে করেন, সেভাবেই কার্যটা সম্পাদন করা উচিত। তাদের পরামর্শ, সুন্নতে খতনার আগে রোগীর স্বজনদের উচিত শিশুর যাবতীয় শারীরিক ইতিহাস ডাক্তারকে বলা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সেরে নেয়া।
বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন গাজী নিউজ পোস্টকে বলেন, শিশুটির বাবা মো. শামীম আহমেদ অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। মামলায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ও পরিচালককে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এনেসথেসিয়া স্পেশালিস্ট ডা. সাইদ সাব্বির আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাসনুবা মাহজাবিন ও পরিচালক।
গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার আরিফুল হক বলেন, শিশু আয়ানের মৃত্যুটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওর চিকিৎসায় কোনও ত্রæটি হয়েছে কি না, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া ঠিক না-বেঠিক হয়েছে এসব বিষয়ে জানার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সবুজ নিউজ পোস্টকে বলেন, বিষয়টির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। যেহেতু চিকিৎসাজনিত মৃত্যু, তাই ঘটনাটি এক্সপার্ট চিকিৎসক দিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ঘটনায় সংশ্লিস্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।
এদিকে গতকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) আয়ানের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশুটির পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিন আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। অপরদিকে গত রোববার অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মইনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন বা লাইসেন্স ছাড়া সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন কঠোর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব রোগীকে রিলিজ দিয়ে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।