স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টঃ
প্রেসবক্স শুধু সাংবাদিকদের হলেও হকিতে থাকেন সাবেক খেলোয়াড়, কর্মকর্তারাও। গতকাল পহেলা বৈশাখের দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেই দুই বড় ম্যাচ দেখেছেন সাবেক খেলোয়াড় ও আন্তর্জাতিক হকি আম্পায়ার আসলাম বেলিম। কুয়েত এয়ারওয়েজে চাকরিসূত্রে কুয়েতেই থাকেন বাংলাদেশের হকির অন্যতম সেরা এই আম্পায়ার। ঈদে কয়েকদিন ছুটি পাওয়ায় ঢাকায় এসেছেন। হকির টানে চলে এসেছেন মাঠে।
ঢাকা হকি লিগ মানেই আম্পায়ারিং বিতর্ক। কালকের বড় দুই ম্যাচ দেখে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ক্লাব ও ফেডারেশন সব পক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন আসলাম, ‘আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত ও ব্যক্তিত্ব আরও দৃঢ় হতে হবে। খেলোয়াড়রা যে কোনো সিদ্ধান্তে সবাই মিলে জড়ো হচ্ছে আবার কর্মকর্তারাও হুটহাট মাঠে ঢুকছে এটা খুবই দৃষ্টিকটু। ফেডারেশন কঠিন আইন প্রয়োগ না করলে ভবিষ্যতে আরো সমস্যা হবে।’ ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক, সহ-সভাপতি, সদস্য পদধারীরাই ক্লাবের ম্যানেজার, কোচ ও নানা ভূমিকায় মাঠে থাকেন ৷ ফলে অনেক সময় আম্পায়ার চাইলেও কর্মকর্তাদের উশৃঙ্খল আচরণের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না সব সময়।
নব্বই ও পরবর্তী দশকে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন আসলাম বেলিম৷ এশিয়ান গেমস, এশিয়া কাপ হকিতে আম্পায়ারিং করেছেন একাধিক। আসলামের সেই জায়গাটা এখন নিয়েছেন সেলিম লাকী। ২০১২ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং শুরু করা লাকী ইতোমধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে একাধিকবার, এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে আফ্রিকা, ইউরোপেও আম্পায়ারিং করছেন নিয়মিতই।
ম্যাচ সংখ্যায় তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া সেলিমকে প্রশংসায় ভাসালেন আসলাম, ‘সে অবশ্যই ভালো করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন বাংলাদেশের গর্ব। নিয়মিত আম্পায়ারিং করায় অনেক অভিজ্ঞ। আমার সময়ে এশিয়ান গেমস ও কাপ ছাড়া তেমন আন্তর্জাতিক ম্যাচ করার সুযোগ ছিল না। তখন অনেক টুর্নামেন্টও ছিল না। আবার অনেক সময় আমিও নানা কারণে যেতেও পারিনি।’
আসলামের আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার সংখ্যা ২৫-৩০ টির মতো হলেও এশিয়ান হকিতে এখনো স্মরণীয়। বর্তমান আন্তর্জাতিক এলিট আম্পায়ার সেলিম লাকী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করতে গিয়ে যখনই শুনে বাংলাদেশি তখনই অনেকে আসলাম ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে। এখন এশিয়ার যারা আম্পায়ারিংয়ের বড় কর্মকর্তা তারা সবাই আসলাম ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’ লাকী এখন দেশসেরা আম্পায়ার হয়েও আসলামকে এগিয়ে রাখলেন , ‘আসলাম ভাই গুরু। তাকে দেখেই আম্পায়ারিংয়ে আসা। তিনি অত্যন্ত উঁচু মানের আম্পায়ার ছিলেন। আমি তার সামনে কিছুই না।’
নব্বই ও পরবর্তী দশকে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন আসলাম বেলিম। এশিয়ান গেমস, এশিয়া কাপ হকিতে আম্পায়ারিং করেছেন একাধিক। আসলামের সেই জায়গাটা এখন নিয়েছেন সেলিম লাকী। ২০১২ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং শুরু করা লাকী ইতোমধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে একাধিকবার, এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে আফ্রিকা, ইউরোপেও আম্পায়ারিং করছেন নিয়মিতই।
বাংলাদেশের হকির অন্যতম কিংবদন্তি মামুনুর রশীদ। খেলোয়াড় হিসেবে আসলাম বেলিম ও কোচ হিসেবে লাকীর আম্পায়ারিং খুব কাছ থেকে দেখছেন। দুই সময়ের দুই সেরা আম্পায়ার সম্পর্কে মামুনের পর্যবেক্ষণ, ‘দুই জন দুই যুগের সেরা নিঃসন্দেহে। দুই জনের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা কঠিন। ঘরোয়া পর্যায়ে দৃঢ় সিদ্ধান্তে আসলাম ভাই এগিয়ে থাকবে আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ম্যাচ পরিচালনায় সেলিম।’
আশি-নব্বইয়ের দশকে দেশের তিন শীর্ষ খেলা ফুটবল, হকি ও ক্রিকেটে আম্পায়ার-রেফারি লাঞ্চনার ঘটনা ঘটত অহরহ। হকিতে আম্পায়ারকে পিটিয়ে হাসপাতালে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গায়ে হাত তোলা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন সময়েও নির্বিঘ্নে ম্যাচ চালিয়েছেন আসলাম। বিশেষ করে নব্বই দশকে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই আম্পায়ার আসলাম। কুয়েত এয়ারওয়েজে চাকরি নেওয়ার পরও ফ্লাইটের মাঝে মাঝে বড় ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। গত এক যুগে অবশ্য আর বাঁশি বাজাতে পারেননি আসলাম। তার ম্যাচ নির্বিঘ্নে হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে আম্পায়ারই রাজা। সেটা সিদ্ধান্তে ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে মাঠে প্রয়োগ করেছি। এর মাধ্যমে আস্থা ও সম্মান অর্জন করেছি।’
আগের মতো এখন আম্পায়াররা শারীরিকভাবে আহত হন না। তবে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করেন খেলোয়াড়েরা অনেক সময় কর্মকর্তারাও চড়াও হন। আম্পায়ারদের বক্তব্য, রিপোর্টে ঘটনার বর্ণনা থাকলেও ফেডারেশন খেলোয়াড় – কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয় না৷ অন্য দিকের মন্তব্য, আম্পায়াররা অনেক ঝামেলা ম্যাচেও সুষ্ঠুভাবে খেলা শেষের রিপোর্ট প্রদান করে।
ফুটবল রেফারি তৈয়ব হাসান আন্তর্জাতিক অনেক বড় ম্যাচ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করলেও ঘরোয়া পর্যায়ে অনেক ম্যাচে থাকতেন নড়বড়ে। হকির সেলিম লাকীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনেকটা প্রযোজ্য। কালকের ম্যাচে লাকীর তিনটি সিদ্ধান্ত রিভিউতে পরিবর্তন হয়েছে। গতকাল মেরিনার্স – মোহামেডান ম্যাচ দেখা আসলামের চোখেও পড়েছে বিষয়টি, ‘আম্পায়ারকে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। দলের রিভিউ না চাইলে বা না থাকলে আম্পায়ার নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে রিভিউ চাওয়া আত্মবিশ্বাসের অভাব।’
স্বল্প সম্মানী, ভিডিও প্রযুক্তি ছাড়াই আম্পায়ারিং করেছেন আসলামরা। এখন সম্মানী বেড়েছে, বিদেশি আম্পায়ার ও ভিডিও প্রযুক্তিও যোগ হয়েছে। তবে বিদেশি আম্পায়ারের মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে আসলামের, ‘বিদেশি আম্পায়ারের মান অবশ্যই উঁচু হতে হবে। যাদের মাধ্যমে আমাদের আম্পায়াররাও উপকৃত হয়। কিন্তু আজ যাদের দেখলাম অভিজ্ঞতায় ও মানে আমাদের অনেকের চেয়ে তেমন এগিয়ে নয়।’
সেলিম লাকী আন্তর্জাতিক এলিট আম্পায়ার ও শাহবাজ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। তারা চলমান লিগে প্রতি ম্যাচে সম্মানী পাচ্ছেন আড়াই হাজার টাকা। সেখানে মান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বিদেশিরা প্রতি ম্যাচে ৩৫ ডলার৷ পাশাপাশি আবাসন ও অন্য সুবিধা। মানে ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থেকেও সম্মানী বৈষম্য থাকলেও এ নিয়ে আর মন্তব্যে আগ্রহী নন সেলিম লাকী। এ নিয়ে অভিযোগ করে আগে উল্টো ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
অনেক দিন পর আসলাম হকি মাঠে এসেছেন। তাই কিছু সময় পর পর অনেকেই ঘিরে ধরছেন তারকা আম্পায়ারকে। দুই-একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হকি আম্পায়ার ট্রেনিংয়ে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন। মন টানলেও পারিবারিক ও পেশাগত ব্যস্ততা একটু কঠিনই আসলামের জন্য। চার দিনের ছুটি শেষে আজই আবার কুয়েতের বিমান ধরবেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিমের বড় ভাই।