হামজাকে সন্তানের মতোই বড় করেছেন
হামজার বাবা একজন ক্যারিবিয়ান হামজাকে এক বছর বয়সে বুকে তুলে নেন দেওয়ান মোরশেদ তার পরিবারেই মুসলমান হয়েছেন হামজা

ক্রীড়া ডেস্ক:
ইংলিশ ফুটবলার হামজাকে নিয়ে বাবা দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর প্রতিটা কথা আদরমাখা। স্নেহের সবটুকু উজাড় করে দিলে যে অনুভূতি বেরিয়ে আসে, হামজাকে নিয়ে ঠিক সেভাবেই কথা বলেন বাবা মোরশেদ চৌধুরী। অথচ তিনি হামজার আসল বাবা নন। হামজাকে জন্ম দেননি।
হামজা একজন ক্যারিবিয়ানের সন্তান। মা রাফিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল একজন্য ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে তার সংসার করা হয়নি রাফিয়া চৌধুরীর। পরে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে হামজার মায়ের বিয়ে হয়। দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সত্য। বায়োলজিক্যালি আমার সন্তান না। হামজার বাবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। আমি যখন বিয়ে করি তখন হামজার এক বছর বয়স।’
এক বছর বয়স থেকে পিতৃস্নেহে বড় করেছেন হামজাকে। লন্ডনে থাকতেই মা রাফিয়া চৌধুরী কোলের শিশুকে নিয়ে নতুন জীবন গড়েন, রাফিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জে। সম্পর্কে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর ফুফাতো বোন রাফিয়া চৌধুরী। হামজা দেওয়ান চৌধুরী নামে নতুন বাবার বংশ পরিচয়ে তার নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়। নতুন নামে বেড়ে উঠেছেন। ক্যারিবিয়ান বাবার কথা সবসময় বলা হয়েছে হামজাকে। চাইলেই যখন-তখন দেখা করতে পারবে। যেতে পারবে। ওসব নিয়ে মোরশেদ চৌধুরী কখনো বাধা দেননি। মাথা ঘামাননি।
হামজার কিসে খুশি হবে, কিসে ভালো হবে সব ভাবনা নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। বিয়ের সময়ে রাফি চৌধুরীকে বলেই নিয়েছিলেন সবাই একই পাল্লায় বড় হবে, একই স্নেহে বেড়ে উঠবে। কেউ আলাদা হবে না। কাউকে অবহেলা করা যাবে না। স্ত্রী রাফি চৌধুরী সেভাবেই মেনে নিয়ে ছিলেন। সেই থেকে হাজমা পুরোপুরি বাংলাদেশের সন্তান হয়ে যান। হামজা ছাড়াও দেওয়ান মোরশেদের ঘরে আরো তিন সন্তান রয়েছে। দেওয়ান মোরশেদ বলেন, ‘আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে হামজা, মেয়ে তাসনিম, মেহেদী ও মাহী।
মুসলিম ধর্ম ভালো লেগেছে হামজার। মোরশেদ চৌধুরী ধর্মভীরু মানুষ। ভালোমন্দ দেখেছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন হামজা।
বাবা-মায়ের হাত ধরে বাংলাদেশে আসেন হামজা। বাংলাদেশে বহুবার এসেছেন হামজা চৌধুরী। শিশু বয়স থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত এসেছেন ছোট্ট হামজা। ১৯৯৭ সালে জন্ম হামজার। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে আসা শুরু হয়। প্রতি বছরই নাকি বাহুবলের স্নানঘাট গ্রামে এসেছেন। হামজা শেষ বার স্নানঘাটে এসেছেন ২০১৪ সালে। এবার বাংলাদেশে আসা হচ্ছে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলবেন বলে। প্রথমবার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আসছেন হামজা।
প্রায় ১১ বছর পর গ্রামে ফিরছেন হামজা। তার জন্য বাড়ি ঘর সাজানো হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। লন্ডন থেকে হামজা তার পরিবারের ছবি পাঠাচ্ছেন, কথা বলছেন চাচাদের সঙ্গে। দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরী হাজমাকে জানিয়েছেন তাকে নিয়ে কী উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। শুনে হামজা বলেছেন, আমি আত্মীয়স্বজনের কাছে আসব। এত উচ্ছ্বাসের কি আছে। সবার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা করতে আসছি-এসব কথা জানালেন মোরশেদ চৌধুরী। হামজা এখন অনেক বড় হয়েছেন। ২৭ বছর বয়স।
মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘আগে হামজা আসত আমার সন্তান হিসেবে। এখন আসবেন একজন ফুটবলার হিসেবে। তার প্রতি আগ্রহের কারণে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। বাড়ির চারদিকে ঘিরে দিয়েছি। টিন-বাঁশ দিয়ে ফাঁকগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আরো একটা কারণ হচ্ছে এবার হাজমা তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে আসবেন। সন্তানরা যদি পছন্দ না করে তাহলে আর কোনো দিন হয়তো আসবে না। ব্রিটিশ নাগরিক ওরা। পছন্দ না হলে আর না-ও আসতে পারেন বাংলাদেশে।’