হালি পেঁয়াজেও লাভের স্বপ্ন চাষিদের

প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি ,পাবনা

মুলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে খুশি পাবনার চাষিরা। মুলকাটা পেঁয়াজের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। চাষিরা এখন হালি পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত। আগামী এক মাসের মধ্যে হালি পেঁয়াজ বাজারে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবার হালি পেঁয়াজেও লাভের আশা করছেন চাষিরা। তবে তারা পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে শঙ্কিত। নতুন হালি পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পাবনা জেলায় এ বছর ৮ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর।

এদিকে জেলায় এবার ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন।

গত মৌসুমের শেষ দিকে হালি পেঁয়াজে এবং এবার কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় চাষিরা হালি বা চারা পেঁয়াজ বেশি করেছেন। যারা গতবার পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারাও এবার লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করেছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাত লাখ মেট্রিক টন যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশের বেশি। আর পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ মেট্রেক টন। সে হিসাবে সারা দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ জানুয়ারি মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে ওঠে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ কন্দ পেঁয়াজ ২৬ শ’ থেকে ৩৩ শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।

হাটের আড়তদাররা জানান, এবার কন্দ পেঁয়াজের বাজারে সুবাতাস বইছে। আগামী মাসের মধ্যে নতুন হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করবে। সে সময় পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। দাম কিছুটা কমলেও আমদানি না হলে চাষিরা লাভবান হবেন।এদিকে চাষিরা জানান, গত ২-৩ বছরে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এজন্য পেঁয়াজের দাম বেশি না হলে তারা ক্ষতির শিকার হবেন।

সুজানগর উপজেলার বামনদি গ্রামের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বীজ কেনা ও চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা ভাড়া করতে হয়। জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন।

সাঁথিয়ার পেঁয়াজচাষি আরশেদ খাঁন ও কানু খাঁন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ কেউ হিসাব করে না। দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে। তাই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দামও প্রতিবছর বাড়লেই কেবল চাষিরা লাভবান হতে পারবেন।তারা জানান, এবার ভালো দাম পেয়ে তারা খুশি। তবে সরকার যদি কৃষকের উৎপাদন খরচের কথা না ভেবে পেঁয়াজ আমদানি করে তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার উজ্জীবিত। এজন্য জেলায় এবার গত বছরের চেয়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও ভালো হবে এবং চাষিরা এবার মুড়ি পেঁয়াজের মতো হালি পেঁয়াজেও লাভবান হতে পারেন।