নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের (উলাইয়া বাংলাদেশ) শীর্ষ নেতা ও গত ৩০ সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ অনলাইন সম্মেলনের দ্বিতীয় বক্তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ। তার নাম- ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিন। তিনি নিষিদ্ধ এ সংগঠনটির বর্তমান সময়ের সক্রিয় নেতা। আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না এবং যে কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। এ কারণে ২০০৯ সালে সরকার এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু থেকেই এ সংগঠনের সদস্যরা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে অনলাইনে দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। তারা গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সত্তা বা সংগঠনকে সমর্থন করে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত, গণতন্ত্রকে উৎখাত ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐ করার ষড়যন্ত্র করে আসছে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারা সরকারবিরোধী অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা ঢাকাসহ সারাদেশে পোস্টারিং করে এবং অনলাইনে প্রচারণা চালায়। সম্মেলনে দুইজন বক্তা ও একজন উপস্থাপক অংশগ্রহণ করে এবং সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে। সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সরকারের সম্পর্কে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে উপস্থাপন করে। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারণ মানুষকে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উস্কানি দেয়। অনলাইন সম্মেলনটি লেবানন ভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে নবী করিম মুহাম্মদ (সঃ) ও ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তাদের মত করে উদাহরণ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে হিজবুত তাহরীরের অনুসারী হওয়ার আহবান জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে খাটো করা হয়েছে। তাদের এ ধরনের কাজ দেশের বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লংঘন হিসাবে প্রতীয়মান হয়।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ইমতিয়াজ জানায়, সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে। বর্তমানে সে বনানীতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর ২০১০ সালে সে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে এবং এ সংগঠনে যোগদান করে। ২০১০ সালের ১২ মে তিনি হিজবুত তাহরীর করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বাড্ডা থানার মামলায় এজহারভুক্ত আসামি হিসাবে ৬ মাস কারাগারে ছিলেন। জেলে অবস্থানের সময় ইমতিয়াজ সেলিম বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ গোলাম মাওলা ও প্রফেসর মহিউদ্দিনের সান্নিধ্য লাভ করে এবং তাদের বয়ানে সে হিজবুত তাহরীরের প্রতি আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। জামিনে মুক্তি পেয়ে সে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ১ বৎসর অবস্থান করে। এরপর দেশে এসে হিজবুত তাহরীরের সদস্য হিসাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর আরও একটি অনলাইন সম্মেলনের বক্তা হিসেবে গণতন্ত্র ও দেশের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে বক্তব্য প্রদান করেন ইমতিয়াজ।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার ইমতিয়াজ মার্শাল আর্টে বøাক বেল্টধারী ও বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক রেফারি। তাছাড়া জাপান কারাতে এসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক। তারা সংগঠনের জন্য তৈরি বিশেষ অ্যাপস এবং অপ্রচলিত এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ফলে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। গোপনে ও প্রকাশ্যে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সমন্বয় করে তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশ বিরোধী পোস্টার, মসজিদে মসজিদে নামাজের পর বয়ান প্রভৃতি কার্যক্রমেও সে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মর্মেও জানা যায়। তাছাড়া অনলাইন সম্মেলনে সে সমন্বয়ক ও ক্ষেত্র বিশেষে বক্তা হিসেবে ভ‚মিকা পালন করে। গ্রেফতারকৃত ইমতিয়াজকে রমনা মডেল থানার মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের (উলাইয়া বাংলাদেশ) শীর্ষ নেতা ও সর্বশেষ অনলাইন সম্মেলনের প্রধান বক্তা মো. তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে গ্রেফতার করে গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।