নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন ট্রাফিক আইনে ১২ পয়েন্ট কাটা পড়লেই ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কথা বলা আছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে, এরইমধ্যে দেশের কিছু কিছু এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে পরীক্ষামূলকভাবে পয়েন্ট কাটার কাজ শুরু হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করলে তাকে সংশ্লিষ্ট আইনে যেমন জরিমানা করা হবে, আবার পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট ওই ব্যক্তির লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটতে পারবেন। যদিও রাজধানীর রাস্তায় দায়িত্বরত একাধিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন— এ রকম কিছু এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। এটা কার্যকর করা হবে বলে শুনে থাকলেও তারা আইনটি সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছুই জানেন না।
চলতি বছরের শুরুতে বিআরটিএ জানিয়েছিল, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার জন্য একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে সফটওয়্যার প্রস্তুত হলে সারা দেশে একযোগে পয়েন্ট কাটার কাজ শুরু হবে। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করছে বিআরটিএ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। যদিও বছরের শেষে এসেও ডিজিটালি কাজটি শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে সূত্র জানায়।
১৩ অপরাধে কাটা পড়বে ১২ পয়েন্ট
আইন অনুযায়ী, মোট ১৩ ধরনের অপরাধে লাইসেন্সধারীর ১২ পয়েন্ট কাটা যাবে। তবে পয়েন্ট ফেরত পাওয়ার উপায়ও আছে। কোনও চালক ছয় মাসের মধ্যে যদি কোনও নিয়ম লঙ্ঘন না করেন, তাহলে চালকের আপিলের পর দুই পয়েন্ট ফেরত পেতে পারেন। পরের আরও টানা ছয় মাস কোনও নিয়ম লঙ্ঘন না করলে আরও দুই পয়েন্ট পাবেন চালক। কিন্তু চালকরা আট পয়েন্ট হারানোর পর দুই বছরের জন্য পয়েন্ট ফেরত পেতে আপিল করতে পারবেন না। আইনে যে ১৩ অপরাধে পয়েন্ট কাটার কথা বলা আছে, সেগুলো হলো— ট্রাফিক সাইন ও সংকেতের বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ৩১ এর বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে— কাটা যাবে এক পয়েন্ট, কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মিটার অবৈধভাবে পরিবর্তন বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালালে কাটা যাবে দুই পয়েন্ট, মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার কোনো ধরনের শব্দ সৃষ্টি বা হর্ন বাজানো বা কোনও যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, পরিবেশ দূষণকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, মোটরযান পার্কিং ও যাত্রী বা পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহার না করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, দ্রুতগতির মোটরযান প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাসড়ক ব্যবহার করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশনাবলি লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে কাটা যাবে এক পয়েন্ট, ইচ্ছাকৃতভাবে পথ আটকে বা অন্য কোনোভাবে অন্য মোটরযানের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে কাটা যাবে দুই পয়েন্ট।
বাস্তবতা কী?
রাজধানীর সড়কে দায়িত্বরত অবস্থায় এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এর কোনটাই কেউ মানেন না। যেখানে সেখানে পার্কিং, যেখানে সেখানে ওঠানামা, হর্ন বাজানো, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধান— কোনোটাই মানা হয় না। এটা যদি ঠিকঠাক মনিটর করা হয়, তবে একজন চালকের একদিনেই ১২ পয়েন্ট কাটা যাবে। ফলে আমাদের দেশে এটা কীভাবে কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
মনিটরিং শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিআরটিএ’র ইঞ্জিনিয়ারিং উইংয়ের পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘কাজ শুরু হয়েছে। এখন ম্যানুয়ালি এটা করা হয়। মাঠ থেকে তথ্য এলে সেটা নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু ডিজিটালি ইনপুট দেওয়ার কাজটি এখনও হয়নি।’ এপর্যন্ত কারোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, তেমনটা হয়নি। কারণ, ১২ পয়েন্ট শেষ হওয়া সময়সাপেক্ষ এবং পয়েন্ট নানাভাবে ফেরত পাওয়ারও সুযোগ আছে।’