৩ দিনের যুদ্ধ বিরতির বিনিময়ে ৫০ জিম্মিকে মুক্তির চুক্তিতে রাজি হামাস

প্রকাশিত: ১১:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট :

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে তিন দিনের বিরতির বিনিময়ে ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার এক চুক্তিতে রাজি হয়েছে। তবে এই চুক্তির সব শর্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে হামাস-ইসরায়েল সম্ভাব্য চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী কাতারের সরকারি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশেষ এক প্রতিবেদনে হামাস-ইসরায়েল সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে কাতারের কর্মকর্তারা হামাস-ইসরায়েলের এই চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তিটি এখনও আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চুক্তিতে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৫০ জিম্মির মুক্তিতে রাজি হয়েছে হামাস। একই সঙ্গে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তি এবং গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির শর্তও দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

গত ৭ অক্টোবর গাজা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা, ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা এবং দুই শতাধিক মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে হামাস। যদি চুক্তিটি চূড়ান্ত হয় তাহলে এক সাথে সর্বোচ্চসংখ্যক জিম্মি মুক্তির ঘটনা ঘটবে।

কাতারের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস এই চুক্তির সাধারণ রূপরেখায় সম্মত হয়েছে। তবে ইসরায়েল এখনও রাজি হয়নি। আর এই চুক্তির বিষয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করছেন।

চুক্তির কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা চলমান থাকায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে কতসংখ্যক ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। গত কয়েক সপ্তাহে কাতার-নেতৃত্বাধীন হামা-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু আলোচনা এখন তিন দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৫০ বেসামরিক জিম্মির মুক্তিকে কেন্দ্র করেই এগোচ্ছে। হামাস চুক্তির রূপরেখায় সম্মত হলেও এর আগে তা জানা যায়নি।

উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল সমৃদ্ধ দেশ কাতারের পররাষ্ট্রনীতির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রয়েছে। হামাস এবং ইসরায়েলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে দেশটির। এর আগেও উভয়পক্ষের মাঝে চুক্তিতে মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছিল কাতার।

রয়টার্স বলছে, এই ধরনের চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে গেলে গাজায় অবশিষ্ট জীবিত বেসামরিক জিম্মিদের সম্পূর্ণ তালিকা হস্তান্তর করতে হবে হামাসকে। তবে বর্তমানে সব জিম্মির মুক্তির বিষয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা চলছে না বলে জানিয়েছেন কাতারের ওই কর্মকর্তা।

এই চুক্তির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এর আগে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জিম্মিদের মুক্তির আলোচনার বিষয়েও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নোনো চুক্তিটি যে আলোচনাধীন সরাসরি তা নিশ্চিত করেননি। তবে তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, নেতানিয়াহু সবকিছু আটকে রেখেছেন এবং যেকোনও ধরনের অগ্রগতিকে হেয় করছেন। তিনি আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বন্দিদের ইস্যুকে কাজে লাগাচ্ছেন। চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে নেতানিয়াহু আন্তরিক নন।

এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। কাতারে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় রয়েছে। ২৪০ জনেরও বেশি জিম্মির মুক্তির বিষয়ে হামস এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যস্থতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাসের সদস্যরা ওই ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায়। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন।

আর গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের টানা হামলায় গত ৪০ দিনে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ।