৩ মাসের হিসাব একসঙ্গে করার কারণেই বিদ্যুতের বাড়তি বিল!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল পৃথকভাবে না করে একসঙ্গে করায় গ্রাহকদের কাছে ভুতুড়ে বিল এসেছে। একসঙ্গে বিল করায় স্ল্যাবের কারণে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি এসেছে। মাসিক বিদ্যুৎ বিলের হিসাব আলাদাভাবে করা হলে এই সমস্যা হতো না। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং রিডিং না দেখে বিল করা। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ছয়টি স্ল্যাব বা ধাপ আছে। ধাপ যত উপরে ঊঠবে দাম তত বেশি হবে। বিদ্যুতের তিন মাসের বিল একসঙ্গে করায় প্রত্যেকের দামের ধাপ অনেক উপরে উঠে গেছে। এতে বেড়ে গেছে বিদ্যুতের দাম। এসেছে ভুতুড়ে বিল।
বিইআরসি আইন অনুযায়ী এভাবে তিন মাসের বিল একসঙ্গে করা যায় না। প্রতি মাসের বিল আলাদা আলাদা হবে। তারপরেও বিতরণ কোম্পানিগুলো যদি তিন মাসের বিল একসঙ্গে যোগ করে গড় করতো তাহলেও এমন হতো না।
করোনাকালে তিন মাস বিলম্ব মাসুল ছাড়া বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সুবিধা দেওয়ার পর হঠাৎ করে জুনের মধ্যে তিন মাসের বিল দেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিন মাসে অনেকেই ঘরের বাইরে যেতে না পারায় বিল পরিশোধ করতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে মে মাসে এসে অধিকাংশ গ্রাহকের বিল অস্বাভাবিক বেশি আসে। এতে চরম হয়রানির মধ্যে পড়েন গ্রাহক। এই অতিরিক্ত বিলের কারণ জানতে একটি বিলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কীভাবে উপরের স্ল্যাবে চলে যাওয়ার কারণে বেড়ে গেছে বিদ্যুতের দাম।
ডিপিডিসির ধানমন্ডির এক গ্রাহক মার্চ মাসে বিল দেন ৪১৩ ইউনিট বিদ্যুতের। যার মূল্য ২ হাজার ৩৯২ দাঁড়ায় টাকা। এপ্রিলে তার ইউনিট এসেছে ৪৯৬। যা ৩ হাজার ৩৬১ টাকার। এই দুই মাস রিডিং না দেখে বিল করা হয়েছে। এরপর মে মাসে এসে রিডিং হঠাৎ করে বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২ ইউনিট। বিল গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৪৭ টাকায়। যা অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ওই গ্রাহক।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও অনেক গ্রাহক। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতরণ কোম্পানির স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেন। তাদের বলা হয়, যেহেতু আগের দুই মাস রিডিং নেওয়া হয়নি। তাই তারা তিন মাসের গড় করে বিল দিয়েছেন। এতে করে কারও কারও বিল বেশি আসছে বলে তারা জানায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তিন মাসের গড় করা হলে বিল যত কম হওয়ার কথা তা না হয়ে সবার অস্বাভাবিক বেশি এসেছে। এতে প্রমাণিত হয়, তারা বিলের গড় করেননি। উল্টো রিডিং বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকের বিদ্যুতের ইউনিট উপরের ধাপে চলে যায়। এতে করেই তার বিদ্যুতের এই ভুতুড়ে বিলের আবির্ভাব ঘটে।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বিলের প্রথম ধাপ ০-৭৫ ইউনিট। এই ধাপে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৪.১৯ টাকা। দ্বিতীয় ধাপ ৭৬-২০০ ইউনিট। এই ধাপে দাম প্রতি ইউনিট ৫.৭২ টাকা। তৃতীয় ধাপ ২০১-৩০০ ইউনিট। এই ধাপে দাম প্রতি ইউনিট ৬ টাকা। চতুর্থ ধাপ ৩০১-৪০০ ইউনিট। এই ধাপে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৬.৩৪ টাকা। পঞ্চম ধাপ ৪০১-৬০০ ইউনিট এই ধাপে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৯.৯৪ টাকা। বিদ্যুৎ বিলের ৫ম (৬০১ ইউনিট থেকে এর ওপরে) এই ধাপে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ১১.৪৬ টাকা।
আবাসিক গ্রাহকের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ধাপে বিদ্যুতের দাম সব থেকে বেশি এই ধাপে যদি কোনও গ্রাহককে ফেলে দেওয়া যায় তাহলে ৯.৯৪ টাকা এবং ১১.৪৬ টাকা করে বিদ্যুতের বিল গুনতে হয়। যাদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চলে না তাদের এই ধাপের বিদ্যুৎ বিল কোনও সময়ই দিতে হয় না। তবে এবার করোনার কারণে তিন মাসের বিল এক সঙ্গে দেওয়াতে এমন বিল হয়েছে। যা গ্রাহকের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী স্ল্যাব পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘অনেকের ক্ষেত্রে তিন মাসের বিল একসঙ্গে করতে গিয়ে বিদ্যুতের দাম উপরের স্ল্যাবে চলে গেছে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা চেষ্টা করেছি, তিন মাসের গড় করে একটা বিল দিতে। যাতে গ্রাহক নিজের স্ল্যাবের বিদ্যুতের দামেই বিল পরিশোধ করতে পারেন। ’
জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের আগেই আমাদের ডিপিডিসিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেন এই বিল বেশি আসছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পযন্ত আমাদের কাছে ১৮ হাজার ওভার বিলিং হয়েছে। এছাড়া কোথাও কোথাও আন্ডার বিলিংও হয়েছে। ১৪ হাজারের মতো আন্ডার বিল হয়েছে। প্রত্যেকটি বিল আবার চেক করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আবার গিয়ে মিটার চেক করবে। ভুল হলে বিলের কাগজে লিখে দিতে হবে বিলে ভুল হয়েছিল। সব মিলিয়ে আমরা সব বিলই ঠিক করে দেবো।’