৪৫ শতাংশ শিশুর জন্ম সিজারে
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে রিপোর্ট ♦ পাঁচ বছরে সিজার বেড়েছে ১১ শতাংশ ♦ শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ১২ শতাংশ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
দেশে গত পাঁচ বছরে গর্ভবতী নারীর প্রসবে সি-সেকশনের (সিজারিয়ান) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশ। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে প্রসব বাড়ার কারণে বেড়েছে সিজারিয়ানের সংখ্যা। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সিজারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০২২ (বিডিএইচএস) এর প্রাথমিক ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এ গবেষণা চালিয়েছে। রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
নিপোর্টের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু প্রমুখ। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সিজারের বেশির ভাগই হয়ে থাকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।
২০২২ সালে এসে দেশের মোট সিজারে জন্মদানের ৮৪ শতাংশই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। এ ছাড়া ১৪ শতাংশ হয়েছে সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাকি ২ শতাংশ হয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিওতে)। ২০২২ সালে বাংলাদেশে মোট ৩৭ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে।
এর মধ্যে ১৬ লাখ শিশু সিজারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে। ২০২২ সালে ঘরে শিশু জন্মদান হয়েছে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৩২৪ জন, সরকারিতে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫৫ জন ও এনজিওতে ৬১ হাজার ৪৮৯ জন।
জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখ করে জরিপে বলা হয়েছে, জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী ব্যবহারের হার বিগত সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৩ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, নারী প্রতি সন্তানের সংখ্যা ২ দশমিক ৩ জন।
তবে কিশোরী বয়সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্রা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। ২০১৭ সালে এ মাত্রা ছিল ২৮ শতাংশ, ২০২২-এ এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। অল্প বয়সে বিয়ের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ২০ থেকে ২৪ বছরের নারীদের মধ্যে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার মাত্রা ২০১১ সালে ছিল ৬৫ শতাংশ, ২০১৭-তে তা কমে দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশে এবং ২০২২ সালে তা ৫০ শতাংশে নেমে আসে। এবারের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ধারাবাহিক তিন বছরের গড় অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে শিশু জন্মের পর মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪৩ থেকে ৩১-এ নেমে এসেছে। এক বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জন এবং এক মাসের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২০ জন। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অর্থাৎ সঠিক বৃদ্ধি ঘটছে না এই হার ৩১ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে এলেও কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তার প্রসবের হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী ৭০ শতাংশ প্রসবই একজন দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় ঘটছে। এ ছাড়া ৬৫ শতাংশ প্রসব কোনো না কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হচ্ছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫১ শতাংশ।