৮ দিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার, নতুন প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার প্রেমিকা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরে নিখোঁজের ৮ দিন পর কলেজছাত্র সুমন মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর পৌর শহরের সজবরখিলা মহল্লার ফুরকান মিয়ার বাড়ির উঠানে সবজি গাছের নিচে সুমনের পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার উপস্থিত থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে নিহতের স্বজনরা সুমনের মরদেহ শনাক্ত করেন। রাতেই সুরতহাল তৈরি করে মরদেহ জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
শনাক্তের পর ছেলের মরদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা নজরুল ইসলাম। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, আমার ছেলে তো কোনো অপরাধ করেনি, কেন তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হল। এসময় তিনি হত্যায় জড়িত সহপাঠী আন্নি, তার বাবা ও প্রেমিক রবিনসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর রাতে শেরপুর পৌর শহরের কসবা বারাক পাড়া নিমতলা মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে ও শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন মিয়া নিখোঁজ হন। ওইদিন রাতে সুমনের বাবা তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি সুমনের সহপাঠী শহরের বাগরাকসা কাজীবাড়ী পুকুরপাড়ের বাসিন্দা শিক্ষক মো. আজিমউদ্দিন ও তার মেয়ে আন্নি আক্তারসহ কয়েকজনকে আসামি করেন।
এ ঘটনায় গত রোববার শেরপুরের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সুমনের বাবা নজরুল। অভিযোগে তিনি বলেন, তার ছেলেকে সহপাঠী আন্নি প্রেমের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখান করে তার ছেলে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুমনকে অপহরণ করা হয়। পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নেন।
সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় আন্নি ও তার বাবাকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন বাবা ও মেয়ে। তাদের দেওয়া তথ্যে আন্নির আরেক প্রেমিক পৌর শহরের সজবরখিলা মহল্লার ফুরকান মিয়া ওরফে ফুরকান পুলিশের ছেলে রবিন ওরফে রনিকে আটক করে পুলিশ। রবিনের দেওয়া তথ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ফুরকান পুলিশের বাড়িতে একটি সবজি গাছের ক্ষেতের নিচে পুঁতে রাখা সুমনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গণমাধ্যমকর্মী ও নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত সুমনের সহপাঠী ও বন্ধু-বান্ধবরা জানান, সুমনের সঙ্গে আন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অনেকদিন আগে আন্নির নানা অপকর্মের কারণে সুমনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আন্নি সুমনের মন জয় করতে পারেননি। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় রাগে ক্ষোভে আন্নি সজবরখিলা মহল্লার রবিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। পরে সুমনকে শায়েস্তা করার জন্য নতুন প্রেমিক রবিনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন আন্নি।
সুমনকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সুমনকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন আন্নি। কিন্তু কিছুতেই সুমনকে বাগে আনতে না পেরে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪ নভেম্বর রাতে সুমনকে ফোন করেন আন্নি। দুজনের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে শেরপুর সরকারি কলেজের সামনে আসতে বলেন আন্নি। তার কথা বিশ্বাস করে সেখানে আসেন সুমন। এসময় সুমনকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে তুলে নিয়ে যান আন্নি, রনিসহ কয়েকজন। এরপর থেকে সুমনের হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সুমনের মা কল্পনা। তিনি সুমনের প্রেমিকা আন্নির ফাঁসি দাবি করে বলেন, আমি আন্নিরে অনেকবার ফোন কইরা কইছি আমার বাবার পিছ ছাইরা দেও। ওর বাপ মায়েরে কইছি। কিন্তু আন্নি শুনে নাই। আমারে কয়, যদি আপনে অন্য কোনো জায়গায় ওরে বিয়া দেন তাইলে আপনার ছেলেরে নিয়া আত্মহত্যা করমু। আন্নি আমার বুক খালি করছে। আমার কইলজার টুকরারে মাইরা ফেলছে। ওর ফাঁসি চাই।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম জানান, এসপির নিদের্শে সুমন অপহরণের ঘটনাটিকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। আটক করা হয় আন্নি ও তার বাবাকে। জিজ্ঞাসাবাদে বাবা-মেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। পরে সোমবার রাতে ময়মনসিংহ থেকে রবিনকে গ্রেপ্তারের পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।
রবিন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুমনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার বাড়ির উঠানে সবজি গাছের নিচে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। পরে মাটি খুঁড়ে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে বলেই দ্রুত হত্যা রহস্য এবং ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এ হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।