মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
আসছে (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বাজেটে বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতা। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অন্তত ৫ লাখ উপকারভোগী বাড়ানো হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এজন্য সব মিলিয়ে আগামী বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ ৩ হাজার ৭২৮ কোটি বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য সরাসরি নগদ অর্থ তথা ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতাভোগীর আওতা বাড়িয়ে নতুন যুক্ত করা হচ্ছে আরও ২ লাখ প্রবীণকে।
এক্ষেত্রে সাধারণ প্রবীণদের ভাতা আগের মতো ৬০০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হলেও ৯০ বছরের প্রবীণ ও ভাতাভুক্ত জনগোষ্ঠীর ভাতার পরিমাণ ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছর এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৬০ লাখ মানুষকে সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৮ লাখ ১ হাজার। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগী রয়েছেন ২৫ লাখ ৭৫ হাজার। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রয়েছেন ২৯ লাখ, হিজড়া জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ৬ হাজার ৮৮০ জন। এছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্য ১৩ লাখ ৪ হাজার। আসছে বাজেটে এসব খাতেও উপকারভোগী বৃদ্ধি করা হতে পারে। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের ১৩০টি কর্মসূচির আওতায় মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দ ৩ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেবেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটীয় উদ্যোগে সরাসরি নগদ অর্থ তথা ভাতার উপকারভোগীর আওতা বাড়িয়ে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আর টিসিবির ভর্তুকি-মূল্যের কার্যক্রম এবং ওএমএসসহ বিভিন্ন রকম খাদ্যসহায়তা ও কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচির আওতায় আসছে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ। জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর এই দুই কর্মসূচিতে সব মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী রয়েছেন ৪ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ২০০ মানুষ; অর্থাৎ আগামী অর্থবছর সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে আরো ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ জন যুক্ত করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক কর্মসূচির আওতায় ১৬ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এটা ১৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ মিশন ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে দুই সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে আয়োজিত সংবাদসম্মেলনে ভোক্তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে দরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সব মিলিয়ে এবার বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট ৬ জুন সংসদে পেশ- আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকবে। বৈঠকসূত্র জানায়, চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেটে নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিফলন হয় কি না, তা দেখতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা বাজেটে তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সতর্কতার সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তাকর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা, আগামী অর্থবছরের বাজেট ছোটই রাখা হচ্ছে। এর আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কেটি টাকা অর্থাৎ ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। অন্য বছরগুলোতে এ বৃদ্ধি হয় ১০ থেকে ১৩ শতাংশের মতো। আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। এছাড়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায় লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি থাকলেও সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আইএমএফের শর্ত অনুয়ায়ী আগামী অর্থবছরে সরকারের ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করার কথা।