আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
পবিত্র ওমরাহ পালন করতে অবশেষে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ইরানের একদল মুসল্লি। দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর সোমবার (২২ এপ্রিল) পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির মুসল্লিরা ওমরাহ পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেন।সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি ওমরাহযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।ইরানি মিডিয়া গত বছরের ডিসেম্বরে বলেছিল, ওমরাহ করতে ইচ্ছুক ইরানিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু সোমবারের আগপর্যন্ত ইরান থেকে ওমরাহযাত্রীদের নিয়ে কোনও ফ্লাইট ছেড়ে যায়নি। আর এটিকে তেহরান ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’ বলে অভিহিত করেছিল।
এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে ছিল চীন।
মূলত ২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। সেবছর সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে নাটকীয় অবনতি ঘটে।মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।
এছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।রয়টার্স বলছে, গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজ পালন করতে সৌদিতে যেতে পারতো। এটি মূলত মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক একটি ইবাদত ও ধর্মীয় কর্তব্য তাদের জন্য যারা তাদের জীবনে একবার এটি পালন করার সক্ষমতা রাখেন।
এছাড়া হজ অবশ্যই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পাদন করতে হয় এবং সেটিও আবার কঠোর বার্ষিক কোটা সাপেক্ষে। অন্যদিকে ওমরাহ বছরের যে কোনো সময় করা যেতে পারে এবং মুসলমানদের জন্য এই ইবাদত বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয় না।রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন ওমরাহযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল-আনজি।